শিরোনাম
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৩১, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১২:৩৭, ৮ জানুয়ারি ২০২৫
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কোদলা নদীতে ৫ কিলোমিটার লম্বা ভূখণ্ড ভারতের দখল থেকে উদ্ধার করে ৫৮-বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে বিজিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে বিজিবির এই দাবি অস্বীকার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বলেছে, এখানে এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও কেউ দখল করেনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিএসএফ এক বিবৃতিতে বিজিবির কোদলা নদীর পাঁচ কিলোমিটার ভূমি উদ্ধারের প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিজিবি জানায়, কোদলা নদী বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়ে মহেশপুরের মাটিলা এলাকায় ৪.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চিহ্নিত করেছে। ১৯৬১ সালে প্রণীত বাংলাদেশ-ভারত (স্টীপ ম্যাপ সীট নম্বর-৫১) মানচিত্র অনুসারে কোদলা নদীর উল্লেখিত ৪.৮ কিলোমিটার নদী সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখার অভ্যন্তরে অবস্থিত।
মহেশপুরের যাদবপুর ইউনিয়নের মাটিলা গ্রামের স্থানীয়রা জানায়, এক সময় এই নদী থেকে প্রচুর মাছ আহরণ করা হতো। স্বাধীনতার পর কোদলা নদী পাড়ের মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে বাংলাদেশের আরও অভ্যন্তরে বসবাস শুরু করলে কোদলা নদীর বাংলাদেশ অংশটুকু ভারতের বিএসএফ দখল করে নেয় এবং সেখানে আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে কৃষকেরা মাঠে চাষাবাদ ও নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারত না।
মহেশপুর ৫৮ বিজিবি জানিয়েছে, সম্প্রতি কোদলা নদীর প্রকৃত মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়টি বিজিবির নজরে এলে তারা প্রথমে বিভিন্ন নথিপত্র, স্থানীয় প্রশাসন ও মানচিত্র থেকে নদীটির প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বিএসএফ’র অবৈধ আধিপত্য বিস্তারের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বিজিবি সদস্যরা সাহসিকতা ও পেশাদারির সঙ্গে কোদলা নদী নিজেদের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে বিজিবি সদস্যরা প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার জন্য যন্ত্রচালিত বোট এবং নদীর পাড়ে দ্রুত টহলের জন্য অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল (এটিভি) বরাদ্দ করেছে।
ভারতের কবল থেকে ৫ কিলোমিটার নদী উদ্ধারের পর সোমবার দুপুরে মহেশপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহ মো. আজিজুস সহিদ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তবে, বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার জানিয়েছে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর কোনো ‘সত্যতা এবং ভিত্তি’ নেই।
বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উল্লেখিত এলাকা ভারতের অংশ, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকের রানাঘাট গ্রামে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক সীমানা কোদালিয়া নদীর বরাবর চলে। রেফারেন্স পিলারের মাধ্যমে এই সীমানা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত। আন্তর্জাতিক সীমানার অবস্থা এবং বিএসএফ-এর দায়িত্ব পালন পদ্ধতি কয়েক দশক ধরে অপরিবর্তিত।’
এ ছাড়া, ১৯ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি সদস্যরা মোটরচালিত নৌকা এবং এটিভি ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টা টহল দিচ্ছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছে বিএসএফ। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এসব প্রতিবেদন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মনগড়া। বিএসএফ এবং বিজিবি যথাক্রমে নদীর উভয় পাশে তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে।’
বিএসএফ দাবি করেছে, এই এলাকায় চোরাচালান একটি বড় ইস্যু। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের কার্যকলাপ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার ফলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা অনেকে কমে এসেছে। ভারতের এক ইঞ্চি জমিও প্রতিপক্ষ দখল করেনি বা দখল করতে পারবে না।’
বিএসএফ আরও দাবি করেছে, ভূখণ্ড উদ্ধারের এই দাবির উৎস হিসেবে বিজিবির ৫৮-ব্যাটালিয়নের নবনিযুক্ত কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিক ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আজকের পত্রিকার খবর অনুসারে ৫৮-ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. আজিজুস সহিদ। বিএসএফ আরও বলেছে, ‘এ ধরনের মিথ্যা ও মনগড়া দাবি কেবল দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সদ্ভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’