শিরোনাম
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯:৪৯, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলা । ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
সোমবার বিকেলে দিনাজপুর জেলা সদরের খামারকান্তবাগ এলাকায় হয়ে গেলো ৪০৯ বছরের পুরোনো এই চড়ক মেলা। যেখানে ছিল নারী-পুরুষের উপচে পড়া ভীড়।
শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই নয়, অন্য ধর্মের মানুষও এসেছিলেন মেলাতে। বিকেল থেকে শুরু হয়ে মেলাটি চলে রাত পর্যন্ত। শুধু এই মেলাটিই নয়, জেলা সদরের ভবাইনগর এলাকায় একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় মুখানৃত্য। দুর-দুরান্ত থেকে মানুষজন আসেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব দেখতে।
অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বসে মেলা, যেখানে পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরাও। ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি মেলার মূল বিষয় ছিল হিন্দু-মুসলীম কোন জাতিভেদ না মেনেই এসেছেন আনন্দ উপভোগ করতে।
মেলায় আগত পপি ব্যানার্জি বলেন, আমি সিলেট থেকে এসেছি দিনাজপুরে এই মেলা দেখার জন্য। আমার ননদ, মেয়ে, ননদের ছেলে, দেবরের মেয়ে পরিবারের সবাই মিলে এসেছি।
গুঞ্জাবাড়ী এলাকার রুপালী রানী সেন বলেন, এখানে আসি চড়ক ঘোরা দেখতে। একজন মানুষের পিঠে কাটা দিয়ে ঘোড়ানো হয়। এটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। চোখে দেখার জন্য এসেছি, এজন্যই এখানে অনেক লোকের সমাগম হয়। এখানে আসলে মানুষের মনের কামনা পুরন হয়। মঙ্গল কামনায় এসেছি।
গুঞ্জাবাড়ী এলাকার সুকান্ত কুমার দাস দিনাজপুরের রাজা-মহারাজার আমল থেকে হয়ে আসছে এই মেলা। সেই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এই মেলাটি হয়ে আসছে। তবে আমরা চাই এই মেলা আরও বড় পরিসরে হোক, ঐতিহ্যটা সবাই জানুক। আর মেলা বসে, সেই মেলাতেও অনেকেই আসেন।
রাজবাটী এলাকা থেকে আসা মো: জালাল বলেন, এই মেলাটিতে সকল ধর্মের মানুষ আসে। এটি দিনাজপুরের একটি সম্প্রীতির বন্ধনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে মোট আগতদের মধ্যে ৫০ শতাংশ হিন্দু, আর বাকী ৫০ শতাংশ মুসলিম। এখানে কোন জাতি, ধর্ম ভেদাভেদ নেই। সকলের আনন্দভরে মেলাতে আসেন।
বড়বন্দর এলাকা থেকে আসা শুক্লা সাহা বলেন, আমরা এখানে দেখেছি, হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, কোন জাতি ভেদাভেদ নেই। এখানে দেখলে বোঝা যাবে যে এখানে ধর্মের কোন বাধা নেই। সবাই আসছে, মেলায় ঘুরছে, চড়ক দেখছে।
ভবাইনগর এলাকার সুবল রায় বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই মেলাতে আসি। এখানে মুখানৃত্য হয়, যা আমাদেও গ্রামের ঐতিহ্য। এই ধরনের মুখানৃত্য বা গমিরা খেলা আর অন্য কোথায় তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। এজন্য পরিবারের সকলে মিলে এখানে এসেছি।
চুনিয়াপাড়া এলাকার সুধীর চন্দ্র বলেন, রাজা-মহারাজার আমল থেকে ৪০০ বছর ধরে এই মেলাটি ও গমিরা খেলা হয়ে আসছে। আমরা সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। যাতে করে আগামীর প্রজন্মও তাদের ইতিহাসের অংশ দেখতে পারে সেজন্য আমাদের এই চেষ্টা।
প্রতি বছরের ১৪ এপ্রিল এসব মেলার আয়োজন হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে এই দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। তবে সারাদেশেই এই দিনটি পহেলা বৈশাখ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ