শিরোনাম
এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ
প্রকাশ: ১৯:৫৯, ২১ এপ্রিল ২০২৫
ঝুঁকি নিয়ে চলছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম । ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস
এমতাবস্থায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কাছে নতুন ভবনটি দ্রুত হন্তান্তরের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শৈলকুপা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ভবনটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। ভবনে ছাদের পলেস্তারা খসে ঢালাইয়ের রড বের হয়ে গেছে। কার্যালয়টির দেয়ালে বড় বড় ফাটল। ছাদের ভিমেও ফাটল ধরেছে। সিলিং ফ্যানের হুকগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। ভবনের অনেক স্থানে মেঝের ঢালাই উঠে গেছে। বিদ্যুৎ লাইনও ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টি শুরু হলে টেবিলের ওপর পলিথিন দিয়ে রক্ষা করা হয় প্রয়োজনীয় দলিল-দস্তাবেজ ও কাগজপত্র।
এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এমতাবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের কার্যক্রম। জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলা শহরের ওয়াপদা এলাকায় ৮০’র দশকে নির্মিত সেই সময়ে কোর্ট ভবন হিসেবে পরিচিত বর্তমানের শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় কার্যক্রম চলছে।
গণপূর্ত বিভাগের আওতায় ২০২৩ সালের শুরুতে পুরাতন ভবনের পাশে দুই তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পান স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোল্লা ট্রেডার্স। তবে ভবন নির্মাণের নির্দিষ্ট সময় পার হলেও এখনো শেষ হয়নি সম্পূর্ণ কাজ। ফলে পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে শৈলকুপা উপজেলা গঠিত। উপজেলায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস রয়েছে। শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রতিদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জমি-সংক্রান্ত কাজে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ যাতায়াত করে। এখানে দুর্ঘটনায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষেরা ও কর্মচারীরা। প্রতিনিয়ত ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, মানুষের মূল্যবান সম্পদের দলিল-দস্তাবেজ ও কাগজপত্র রক্ষার স্বার্থে অফিসের কার্যক্রম দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবনে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। তা না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
শৈলকুপা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস করণিক আশিস কুমার সাহা বলেন, ‘বর্তমান ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। মাঝে মাঝে ছাদের পলেস্তারা ভেঙে ভেঙে পড়ছে। অনেকে এর আগে বড় দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। বৃষ্টির সময়ে রেকর্ডপত্র ভিজে যাচ্ছে। অনেকবছর ধরে সমস্যা, তবে গত ৬ মাস ধরে বেশি দেখা যাচ্ছে। দ্রুত নতুন বিল্ডিং হস্তান্তর না করলে রেজিস্ট্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দলিলপত্র রাখার মতো আর কোনো জায়গা নেই। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের নতুন ভবন প্রয়োজন। আমরা বহুবার গণপূর্ত বিভাগ ও ঠিকাদারকে জানিয়েছি। হস্তান্তরের মেয়াদ শেষ হলেও কি কারণে হস্তান্তর হচ্ছে না আমরা সেটা বুঝতে পারছি না। গণপূর্ত বিভাগকে জানালে তারা বলছে, তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। কিন্তু দেখছি দেখছি করেই এতোদিন কেটে যাচ্ছে।’
জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা নজরুল ইসলাম ও জিয়াউল রহমান নামে দুজন বলেন, ‘ভবনটির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। বৃষ্টি আসলে ছাদ থেকে পানি পড়ে। এতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছি। আতঙ্কে থাকি কখন যেন ছাদ ভেঙে পড়ে। ভবনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করলে আমাদের সাধারণ জনগণের জন্য খুবই উপকার হবে, আমরা আরও ভালো সেবা পাবো।’
দলিল লেখক জীবন বাবু বলেন, ‘ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই অফিসের কার্যক্রম দ্রুত নতুন ভবনে স্থানান্তর করা উচিত।’
শৈলকুপা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সোনালী খানম বলেন, ‘কোর্ট ভবনে দীর্ঘবছর ধরে রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম চলছে কিন্তু বর্তমানে ভবনটিতে ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের নতুন ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে, তবে হস্তান্তর করা হয়নি। আমরা হস্তান্তরের জন্য বার বার চেয়েছিলাম আশ্বস্ত করা হলেও এখনো স্থানান্তর সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষের গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ ও কাগজপত্র রেকর্ডরুমে সংরক্ষণ থাকে। ভবনটির ভিতরে বৃষ্টির পানি আসে। যেখানে-সেখানে আমরা কাগজপত্র নিরাপদ রাখতে পারছি না। যেহেতু বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ, বলতে গেলে প্রতিটি মানুষের সম্পদ এটি। আমরা চাই সবার এই সম্পদ যেন আমরা সুন্দরভাবে রক্ষা করতে পারি এটিই আমাদের চাওয়া। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, আমরা যেন দ্রুত নতুন ভবনটি পেয়ে সেখানে উঠতে পারি এবং মানুষের চাহিদামতো সেবা দিতে পারি।’
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শামীম হোসেন মোল্লা জানান, ‘ভবনের কাজ হয়ে গেছে। একটি গভীর নলকূপের পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য দেরি হয়েছে। রেজাল্ট এসেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।’
ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ