ঢাকা, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

১০ বৈশাখ ১৪৩২, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

ঝিনাইদহ-যশোর ছয় লেন প্রকল্প

চার বছরেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই, ভোগান্তি চরমে

এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ

প্রকাশ: ১৭:৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

চার বছরেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই, ভোগান্তি চরমে

চার বছরেও প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই । ছবি: ঢাকা এক্সপ্রেস

চার বছর আগে অনুমোদন হলেও এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন প্রতিদিন এই সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১-এর আওতায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে সাড়ে ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার ছয় লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। এর মধ্যে ব্যয় একই রেখে প্রকল্পে মেয়াদ একবার বাড়িয়েছে সরকার। ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু মেয়াদ এক বছর থাকলেও কাজের এখনও ৯৪ শতাংশ বাকি রয়েছে।

ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ ঝিনাইদহ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম লটে রয়েছে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়ক।

দ্বিতীয় লটে মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে মুরাদগড় পর্যন্ত ১৫.৮ কিলোমিটার সড়ক। মুরাদগড় থেকে যশোর পর্যন্ত বাকি অংশটুকু তৃতীয় লটে রয়েছে। প্রথম লটে দুটি ভেহিকুলার ওভারপাস (ভিওপি), ২২টি কালভার্ট ও দুটি সেতু রয়েছে। এরমধ্যে ভেহিকুলার ওভারপাস, একটি সেতু ও আটটি কালভার্টের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া লট-২ এর অধীন একটি সেতু, দুটি ভিওপি ও ১৯টি কালভার্ট রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস, চুটলিয়া মোড় এলাকায় শেষ হয়েছে ফ্লাইওভারের পাইলিংয়ের কাজ। ধোপাঘাটা সেতুর গার্ডার স্থাপন এবং কিছু কালভার্ট উন্নয়নের কাজও করা হয়েছে। তবে সড়কের মূল উন্নয়ন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে আছে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। ফলে প্রকল্পের মূল কাজ থমকে আছে বছরের পর বছর। ধূলাবালি, খানাখন্দে ভরা সড়ক ও ধীরগতির যান চলাচল মহাসড়কটিকে পরিণত করেছে বিপদের আরেক নামে।

আব্দুর রাজ্জাক নামের এক গাড়িচালক বলেন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন হাজারো যাত্রী, পণ্যবাহী ট্রাক ও গণপরিবহন। খানাখন্দে ভরা সড়কে ধূলাবালি ও কাদা সব মিলিয়ে চালকদের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে যাত্রীরা পড়ছেন চরম বিপাকে।

শাহানাজ পারভীন নামে এক যাত্রী বলেন, আমি প্রতিদিন কালীগঞ্জ থেকে ঝিনাইদহ শহরে যাতায়াত করি। সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারি না। ধূলাবালিতে চোখে-মুখে জ্বালা করে, যানজটে সময় নষ্ট হয়। এত কষ্টের পরেও উন্নয়ন দেখছি না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. এনামুল হক বলেন, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে পণ্য আনা-নেয়ায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ট্রাকগুলো ধীরে চলে, আবার মাঝে মাঝে বিকল হয়ে পড়ে। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের অধীন ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ ও যশোর সদর উপজেলার মোট ৩০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।  ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস থেকে যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার। প্রকল্পের অধীন মহাসড়কটিতে থাকবে একটি শর্ট ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫টি কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস।

এছাড়া প্রকল্প করিডোরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তর করার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ডিজাইন করার কথা রয়েছে।

উইকেয়ার ফেজ-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিলন আলী বলেন, সড়কের মূল অংশের কাজের অগ্রগতির জন্য ভূমি অধিগ্রহণ জরুরি, প্রক্রিয়াটি চলমান আছে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসক দপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটা যতদ্রুত সম্পূর্ণ হবে আমাদের প্রকল্পের গতি ততদ্রুত বৃদ্ধি পাবে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা কাজ শেষ করতে পারবো।  

ঝিনাইদহ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার (এলএও) প্রধান সহকারী আলাউদ্দীন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজ শেষ হবে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল ঝিনাইদহ বলেন, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কালীগঞ্জ অংশটা আমরা ইতিমধ্যেই শেষ করে ফেলেছি। সদর অংশের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।

 

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন