ঢাকা, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২২ মাঘ ১৪৩১, ০৬ শা'বান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে সমুদ্র ও স্থলবন্দরে ফল খালাস বন্ধ
Scroll
জানুয়ারিতে সড়কে ঝরেছে ৬০৮ প্রাণ; রোড সেফটির প্রতিবেদন
Scroll
পুরোপুরি কার্যকর ১২ ব্যাংক, বাকিগুলো খুঁড়িয়ে চলছে: অর্থ উপদেষ্টা
Scroll
রাজনৈতিক দলগুলো সাফল্য চাইলেও সরকার সফল হতে পারছে না: মান্না
Scroll
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২
Scroll
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত প্রায় ৬২ হাজার
Scroll
দেনা আদায়ে সরকারকে চাপ বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের, লোডশেডিংয়ের শঙ্কা
Scroll
বিশ্ব ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু
Scroll
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে: খন্দকার মোশাররফ
Scroll
আগামীতে টঙ্গীতে ইজতেমা না করার শর্তে এবছর অনুমতি পেলেন সাদপন্থীরা; মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন
Scroll
ইউএসএআইডির প্রশাসক নিযুক্ত হলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও
Scroll
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প, তবে চীনের ওপর নয়
Scroll
ঝাউদিয়া থানার দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ
Scroll
সুদানে ভয়াবহ সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ৬৫
Scroll
২০৫ ভারতীয়কে দেশে পাঠাল আমেরিকা
Scroll
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে দুদকের চিঠি

নানামুখী বৈষম্যের শিকার

পথে বসতে চলেছে মধুমতি মডেল টাউনের সাড়ে ৩ হাজার প্লট মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১:১৪, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১২:০৫, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পথে বসতে চলেছে মধুমতি মডেল টাউনের সাড়ে ৩ হাজার প্লট মালিক

সবুজের সমারোহ নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে শত শত গাছ। তাতে বসে মনের সুখে গান গাইছে পাখি। ক্ষণে ক্ষণে নির্মল বাতাস এসে নাড়িয়ে যাচ্ছে গাছের পাতা। রাজধানীর অদূরে আমিনবাজারের পাশে মধুমতি মডেল টাউনের এমন পরিবেশে গড়ে উঠা আবাসনের ৩ হাজার ৫০০ জন মালিক চরম আতঙ্কের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। আবাসনে বসবাসরত বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্যায়ভাবে বেসরকারী পরিবেশ সংস্থা বেলার প্ররোচনা ও মামলার প্রেক্ষিতে নিদারুণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন জমির মালিকরা। ইতোমধ্যে আদালতের রায় কার্যকর করতে মধুমতি মডেল টাউনে রাজউক উচ্ছেদ অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে মধুমতি মডেল টাউনের প্লট মালিকরা। সাভারের বলিয়ারপুরে মধুমতি মডেল টাউনের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে প্লট মালিকরা বলেন, ‘মধুমতি টাউনের চারপাশে বর্তমানে সরকারের পাওয়ার প্লান্ট, সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন প্লান্ট ও বিনোদন পার্ক থাকলেও আমরা জানতে পেরেছি রাজউক অভিযান চালিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ ও প্রবেশ মুখের রাস্তা কেটে আমাদের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিবেন। ইতিপূর্বে আমাদের দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টরা বললেও সে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এমন প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে আমাদের পথে বসানোর পাঁয়তারা চলছে।’

প্লট মালিক পক্ষের দাবি, গত ২০-২৫ বছর ধরে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে তারা বসবাস করছেন। ২০০৪ সালে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশবিদ আইনজীবী সমিতি (বেলা) একটি রিট মামলা দায়ের করে। এর আগেই বেশিরভাগ প্লট মালিকরা জমি কিনেছেন। ২০০৫ সালে উক্ত মামলায় রায়ে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করে প্লট ক্রেতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়। উক্ত রায়ে প্রকল্প বৈধ করার রাস্তা খোলা রাখা হয়। এই রায়ের প্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ৯ টি ছাড়পত্রের মধ্যে ৮টি সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বেলা। আপিলের রায়ে মধুমতিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং প্লট মালিকদের জমাকৃত অর্থের দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু গত একযুগে একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

মধুমতি প্রকল্পের অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের বহু নামকড়া আবাসন প্রকল্প জলাশয় ভরাট করে তৈরি হয়েছে। বেলা কি মধুমতি ছাড়া আর কারো সঙ্গে আইনী লড়াইয়ে জড়িয়েছে? কারও দিকে আঙ্গুল তুলেছে? এতে কি যথেষ্ট প্রমাণ হচ্ছে না যে বেলা’র দ্বারা বৈষম্যের শিকার মধুমতি। 

অভিযোগ জানিয়ে প্লট মালিকরা বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি বেলা’র সাবেক প্রধান নির্বাহী বর্তমান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে অ্যাকশন নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। রাজউক বাধ্য হয়ে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় সভার আয়োজন করে। সেখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বেলা‘র প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। তাহলে কেনো মধুমতির পক্ষ থেকে কাউকে ডাকা হয়নি। বেলা থাকতে পারলে মধুমতি কেনো থাকতে পারবে না? এ থেকেও কি বৈষম্য স্পষ্ট হয়না?’

বাসিন্দারা জানান, প্লট মালিকরা বেশীরভাগ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক, বেসামরিক সরকারি-আধাসরকারি সংস্থার কর্মচারি, শিক্ষক, দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসী শ্রমিক, যারা জীবনের শেষ সম্বল দিয়ে এই প্রকল্পের প্লট কিনেছেন। সরকারের ভূমি অফিস প্লটগুলো রেজিস্ট্রেশনও দিয়েছে। তার ভিত্তিতে প্রায় হাজারখানের প্লট মালিক এখানে মাথা গুঁজার ঠাই করে নিয়েছেন। এখানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিদ্যুতের লাইনও দিয়েছে৷ গত প্রায় দুই দশক ধরে বাসিন্দারা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন।
 এ ব্যাপারে আরও জানতে মধুমতি মডেল টাউনের প্লট মালিক সুমন ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বহু বছর আগে এই জমি কিনেছি। এটা আমাদের স্বপ্ন। আমাদের ছেলে-মেয়েদের সাথে অভিভাবক হয়ে আমরাও রাস্তায় নেমে জীবন দিয়ে লড়াই করেছি, বৈষম্য বিরোধী একটি সরকারের স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সেখানে কেউ ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে যদি আমাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা জমি থেকে বঞ্চিত করেন, সেটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো, একইসাথে পথেও লড়ে যাবো। কোনোভাবেই এই জমি ছাড়া হবে না। প্রয়োজনে জীবন দেবো, জমি দেবো না।’

মধুমিতার প্লট মালিকদের পক্ষ থেকে জানা যায়, ওয়েবসাইট, বিলবোর্ড, রিহাব মেলায় মেট্রোর অংগ্রহন ও আস্থা অর্জন, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ইত্যাদি ধারাবাহিক কার্যক্রমে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা এই প্রকল্পের প্লট ক্রয় করেন। প্রচারণাকালে মেট্রো মেকার্স কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকাটিকে ‘বন্যামুক্ত’ এলাকা বলে ঘোষণা করে। মেট্রোর প্রকাশ্য বন্যামুক্ত প্রচারণার পরও তখন পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ সেল, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কোন সরকারি সংস্থা প্রকল্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নাই বা সম্ভাব্য ক্রেতাদের জমি না কেনার জন্য কোন রকম সতর্কতা বার্তাও দেয়নি। বরং ২০০৫ সালে প্রকল্পটি আদালতের একটি রায়ে অবৈধ ঘোষণার পরও ২০০৭ সাল পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন বিভাগ; যেমনঃ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ, তিতাস গ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন, ঢাকা ওয়াসা, পল্লী বিদ্যুৎসহ সরকারের অন্তত ৮টি বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেট্রোকে ছাড়পত্র দেয়।

প্লট ক্রেতা ও সাধারন্যে ধারনা রয়েছে যে, মহামান্য আদালতের রায়ে পরিবেশ বিষয়ক এনজিও বেলা'র প্রভাব ছিল এবং মেট্রো'র মালিকদের তখনকার রাজনৈতিক পরিচয়ও রায়ের পক্ষে কাজ করেছিল। মধুমতির মালিকপক্ষকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তৎকালীন সরকার আওয়ামী লীগের দাপটে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। সেই থেকে মধুমতির মালিক এখনো দেশে ফেরেননি। যদি মধুমতির মালিকপক্ষ দেশে থেকে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ পেতেন, তাহলে সাধারণের ক্ষতিপূরণ পেতে সুবিধা হতো। অথবা প্রকল্পের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসা যেত, যাতে সরকার ও জনসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষিত হতো।’

প্লট মালিকরা মনে করেন, মহামান্য আদালতের রায় প্রদানে প্রকল্পের পক্ষের বাস্তব ও যৌক্তিক বিষয়সমূহ আমলে নেওয়া হয়নি। ‘মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধ বা বাতিল ঘোষণা বা প্লট ক্রেতাদের উচ্ছেদ করার যেকোন সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক হওয়ার আরো প্রাসঙ্গিক যুক্তি হচ্ছে সরকারী সংস্থাগুলি উত্তরা ফেজ ১, ২ ও ৩, পূর্বাচল, ঝিলমিল এবং বারিধারা জে-ব্লকের মতো জলাভুমিতে বিশাল আবাসন প্রকল্প তৈরি করায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বেসরকারি আবাসন উদ্যোক্তারা এটি অনুসরণ করে বনশ্রী, বসিলা, জলসিঁড়ি, আসিয়ান, ঢাকা উদ্যানসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এখন প্লট মালিকদের প্রশ্ন হলো, শুধুমাত্র মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প কেন বৈষম্যের শিকার হবে?’

আরও পড়ুন