শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ০৯:০৭, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
গণপরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে না সাজালে কোনো প্রকল্প বা উন্নয়নেই রাজধানীর যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সচেতন হতে হবে নাগরিকদেরও। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ, সম্ভাবনা ও নগর ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-গুলশান) মো. মফিজুল ইসলাম। শুনেছেন ঢাকা এক্সপ্রেস প্রতিনিধি।
সরাসরিই যদি বলি, নগরবাসী একপ্রকার ধরেই নিয়েছেন এই শহর থেকে যানজট নিরসন সম্ভব নয়। আপনিও কি তেমনটাই মনে করেন?
যানজট সমস্যার পুরোপুরি সমাধান এই মুহূর্তে হয়তো সম্ভব নয়। তবে খুব সহজেই আমরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ সমাধান করতে পারি।
সেটা কীভাবে?
আমি ট্রাফিকে জয়েন করার পর যেটা লক্ষ্য করলাম, আমাদের লোকাল বাস যেগুলো চলে সেটা বিভিন্ন কম্পানির। সেখানে অসুস্থ একটা প্রতিযোগিতা আছে। যাত্রী নেওয়ার জন্য যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকে বাস। রাস্তার মাঝখানেও বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করায়। পেছনের গাড়িগুলো তখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। এটা যানজটের অন্যতম বড় কারণ। এই সমস্যার কথা আমরা সবাই জানি। এটা আমরা আজ্যবধি ঠিক করতে পারিনি।
ড্রাইভাররা তো বলেন, দিনশেষে খরচা উঠাতেই যাত্রী উঠানোর এমন চেষ্টা করতে হয় ….
আরেকটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা হলো মালিকরা ড্রাইভারদের কাছে বাস ভাড়া দিয়ে দেয়। ভাড়া যখন দিয়ে দেয় তখন তো ড্রাইভারকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিন শেষে মালিককে দিতে হয়। এরপরে তার বাসের খরচ, সহকারির খরচ আছে। ড্রাইভার তখন বেপরোয়া হয়ে উঠে। ইচ্ছেমতো গাড়ি চালানোর চেষ্টা করে। তবে, মালিকরা যদি ড্রাইভারদের বেতন দিয়ে রাখেন। তাহলে একটি বাস মালিকের নিয়ম মেনে অনেক ড্রাইভারই চালাতে পারেন। আমরাও বাস মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত বসে দিক নির্দেশনা দিতে পারি।
এই সময়ে এসে আপনারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন?
আমরা চেষ্টা করছি বাসগুলোকে নির্দিষ্ট স্টপেজ দেওয়ার জন্য। কড়াকড়িভাবে সেই স্টপেজেই বাসগুলো থামতে হবে। এই ব্যবস্থা খুব শিগগিরই শুরু করবো। আমি আজকেও মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বলেছেন নির্দিষ্ট স্থান থেকে টিকিট কেটে বাসে যাত্রী উঠাবেন। টিকিট সিস্টেমটা চালুর জন্য বাস মালিক সমিতির কথায় আন্তরিকতা পেয়েছি। আরেকটি ব্যাপার জনসচেতনতা বৃদ্ধি খুব জরুরি। সম্মানিত নগরবাসীরও অনেক বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
নগরবাসী কোন বিষয়ে সচেতন নয় বলে মনে করেন?
সম্মানিত নগরবাসী হয়তো একটা ব্যাপার অনেক সময় নিজেরাও খেয়াল করেন না। নিজেদের অজান্তেই এটা করেন, যত্রতত্র রাস্তা পার হয়। অনেক সময়ই দেখা যায় আমরা সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছি, ফুল সুইংয়ে গাড়ি যাচ্ছে, এর মধ্যে একদল লোক নিজেদের মতো করে রাস্তা পার হচ্ছেন। এটি তাদের জীবনের জন্যও যেমন ঝুঁকি, একই সময়ে ট্রাফিকও বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গেও কথা বলছি, যেসব জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ দরকার, সেটা করার চেষ্টা করছি।
সচেতনতার কথা বললাম এজন্য, ব্যবহারের মতো ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও মানুষ আইন মানতে উৎসাহী হচ্ছেন না। এই জায়গাটায় আমার মনে হয় মানুষের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত। এগুলোর দিকে নজর দিলে আমার মনে হয় জ্যাম প্রায় ৩০ ভাগ কমে যাবে।
শহরের মধ্যকার বাসস্ট্যান্ডও তো আরেক প্রতিবন্ধকতা…
অবশ্যই। শহরের মধ্যকার বাসস্ট্যান্ডগুলো সঠিক জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। যেমন মহাখালির মতো বাসস্ট্যান্ড। এই বাসস্ট্যান্ডের যে ধারণ ক্ষমতা, এর তিনগুণ বাসকে অনুমতি দেওয়া আছে এখানে আসার। স্বাভাবিকভাবে তারা তো সঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘসময়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন শত চেষ্টা করেও যানজট যথার্থভাবে নিরসন করতে পারে না। এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার।
বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘদিন অকেজো বাস পরে থাকতেও দেখা যায়…
এটা খুবই স্বাভাবিক যে গাড়িগুলোর আসা যাওয়া করতে হবে। কিন্তু দেখা যায় এখানে অনেক গাড়ি দশদিন ধরে বসে আছে। মহাখালি বাসস্ট্যান্ডে হয়তো সাতশো থেকে আটশো গাড়ির ধারণক্ষমতা আছে, কিন্তু আড়াই থেকে তিন হাজার গাড়ি ঢোকে। বেশিরভাগ গাড়ি রাস্তা থেকে মানুষ উঠিয়ে ব্যাক করে। একটা হযবরল অবস্থা বলা যায়। এগুলো সমাধানের চেষ্টা শুরু করেছি। এটাও বলতে পারি প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাস্তাঘাট কম। তারপরও যা আছে সেখানেও এই জায়গাগুলোতে যদি উন্নতি করা যায় তাহলে ট্রাফিক জ্যাম অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রশাসন কতটা দায়িত্ব পালন করতে পারছে?
মানুষের সচেতনেতা খুব জরুরি। মানুষ যখন সচেতন হবে তখন দেখা যাবে সব সিস্টেমই সুন্দরভাবে রান করবে। পুরো নগরবাসী যদি মনে করে, আমি ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালাবো, পথ চলবো-তাতেই অনেকটা সমাধান সম্ভব। ট্রাফিকের পক্ষ থেকে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি কোথায় কি করা যায়। আমাদের কাছে যদি মনে হয় এখানে রাস্তা ব্লক করলে ভালো হবে, সেটা আমরা করছি। রাস্তা খুলে দিলে ইমপ্রুভ হবে, সেটা সময়মতোই করার চেষ্টা করছি আমরা। মূল বিষয়টি হলো মানুষের সচেতনেতা। এছাড়া বাস মালিক থেকে শুরু করে ড্রাইভার হেল্পারদের ট্রেনিংয়ের দরকার আছে। এদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।