শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হলো অনন্যতায় ঐক্যতান।
আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সচেতনতামূলক সেমিনার, র্যালি ও ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করেছে। এছাড়াও, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। ক্যানসার একটি জীবনঘাতী রোগ, যা বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এবং সঠিক চিকিৎসা পেলে ক্যানসার নিরাময় সম্ভব।
ধূমপান, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং পরিবেশ দূষণ ক্যানসারের প্রধান কারণ। তাই জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এছাড়াও, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা জরুরি।
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যানসার রোগী
দেশে প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যানসার আক্রান্ত। নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি লাখে ৫৩ জন। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশের দায়ী এই ক্যানসার। ৩৮ ধরনের ক্যানসারে মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বেশি। ২০৫০ সালে দেশে ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
নাজুক চিকিৎসা ব্যবস্থা
দেশে ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই নাজুক। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ছাড়া দেশের অন্য সাতটি হাসপাতালে নামমাত্র ক্যানসার চিকিৎসা সেবা চালু আছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল ও শয্যাসংখ্যারও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য এ রকম একটি করে ক্যানসার সেন্টার থাকা দরকার। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। মানসম্পন্ন চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে ১৭০টি ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা দরকার। কিন্তু আছে মাত্র ২২টি। এর মধ্যে যেগুলো উন্নতমানের সেগুলোর বেশির ভাগই ঢাকায় অবস্থিত।
অপ্রতুল যন্ত্রপাতি
দেশে প্রথম ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত আট মাস ধরে এই হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের কোভাল্ট-৬০ মেশিন নষ্ট আছে। এ কারণে রোগীরা রেডিওথেরাপি দিতে পারছে না। সারা দেশে এই যন্ত্র রয়েছে আটটি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের লিনিয়ার মেশিনটিও কয়েক বছর ধরে নষ্ট। শুধু একটি হাসপাতালে চালু আছে পুরোনো পদ্ধতির কোভাল্ট মেশিন। বেসরকারিভাবে এ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় রেডিওথেরাপি সেবার বাইরেই থাকছেন রোগীদের একটা বড় অংশ। দেশে ক্যানসার আক্রান্ত মানুষ ১০ লাখের বেশি। এ রোগে খুব জরুরি চিকিৎসা রেডিওথেরাপি। আক্রান্তদের ৭৫ ভাগেরই এ সেবা দরকার হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, মাত্র ১৩ ভাগ রোগী দেশে এ সেবা পান। বড় কারণ রেডিওথেরাপি যন্ত্রের ভয়াবহ সংকট।
ঢাকা মেডিকেলে ১৪ বছর ধরে নষ্ট আধুনিক পদ্ধতির লিনাক মেশিন। পুরোনো পদ্ধতির কোভাল্ট মেশিন দুটিও কাজ করে না। জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালেও রেডিওথেরাপি সেবা পুরোপুরি বন্ধ। এ দুই হাসপাতাল ছাড়া আরও আটটি হাসপাতালে রেডিওথেরাপির যন্ত্র থাকলেও কোনোটিই সচল নেই। শুধু চট্টগ্রাম মেডিকেলে চালু আছে একটি কোবাল্ট মেশিন।
দেশে কি সম্ভব ব্যয়বহুল চিকিৎসা
৫০০ শয্যার জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সারা বছর রোগীর ভিড় থাকে। সহজে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। আর দরিদ্র রোগীরা বেশি ক্যানসারে আক্রান্ত। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। অনেক পরিবার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ে।
কী করার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা দিলে বেশিরভাগ ক্যান্সার রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা সবচেয়ে অবহেলিত। এ নিয়ে কেউ গুরুত্বও দেয় না। এ চিকিত্সাব্যবস্থা সম্প্রসারণ করে মানুষের হাতের নাগালে পৌছে দেওয়ার দাবি উঠেছে। যাতে রোগীরা বিদেশে না গিয়ে দেশেই উন্নত চিকিৎসা পেতে পারেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।