ঢাকা, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১২ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ঢামেকের বহির্বিভাগে চিকিৎসা বন্ধ
Scroll
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া নামের আগে ডাক্তার পদবি নয়: হাইকোর্ট
Scroll
এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মারা গেছেন
Scroll
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে জিম্মি হওয়া ৮০ জনকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, নিহত হয়েছেন ১৩ জন
Scroll
দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ, একীভূতকরণ কিংবা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়
Scroll
সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন
Scroll
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকি আক্তারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মধ্যরাতে শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্‌বিতণ্ডা: বিশ্বনেতারা দুই ভাগে বিভক্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:৪৫, ১ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ১২:৪৫, ১ মার্চ ২০২৫

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্‌বিতণ্ডা: বিশ্বনেতারা দুই ভাগে বিভক্ত

বিশ্ব রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচনার বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র বাগ্‌বিতণ্ডা-উত্তেজনা। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েক শ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন; কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি। তাই সবার চোখ ছিল গতকালের বৈঠকে।

জেলেনস্কিকেই সমর্থন ইউক্রেনীয়দের

হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর দেশবাসীর সমর্থন পাচ্ছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিয়েভের বাসিন্দা এবং পেশায় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক মিলা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেটা বুঝতে পেরেছেন।

বন্ধন অটুট রাখতে হাল ছাড়ছেন না জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নজিরবিহীন উত্তপ্ত বৈঠকের পর দেশটির সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কি গতকাল শুক্রবার বলেছেন, বৈঠকে ট্রাম্প চিৎকার-চেঁচামেচি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এখনো মেরামত হতে পারে। গতকাল হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে ট্রাম্প-জেলেনস্কির মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে প্রত্যাখ্যান করছেন বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ শেষে ট্রাম্প-সমর্থক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে এক সাক্ষাৎকার দেন জেলেনস্কি। সাক্ষাৎকারে ওই আশা ব্যক্তি করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কির কাছে জানতে চাওয়া হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যকার সম্পর্ক ‘দুই প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের চেয়ে বেশি’ বলে মন্তব্য করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, বিশাল ও অস্ত্রশস্ত্রে অধিকতর সজ্জিত রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে ওয়াশিংটনের সহায়তা ইউক্রেনের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।

ওভাল অফিসে একেবারেই ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সূচনা হওয়ার পর জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়ার এ প্রস্তাব দিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বসুরি জো বাইডেনের শাসনামলে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে গত তিন বছর ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা দিয়ে সমর্থন জানিয়ে আসার নীতি গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গতকাল ট্রাম্পের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার এক বৈঠকেই এ নীতি একেবারে উল্টে গেছে। ট্রাম্পের পছন্দের সংবাদমাধ্যমটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আপনার (ট্রাম্প) সমর্থন ছাড়া এটি (লড়াই চালানো) কঠিন হবে।’

বিরল কাণ্ড

হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর হোয়াইট হাউস এ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায়। এরপর জেলেনস্কি ও তাঁর সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। বৈঠকে শুধু ট্রাম্প নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন, এমন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।’ এ সময় মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে জেলেনস্কি তাঁদের প্রস্তাবিত শর্ত মেনে নিতে অস্বীকার করছেন বলেও তাঁর সমালোচনা করেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স।

জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্ত আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি, এটা ভালো কোনো বিষয় নয়।’

ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ছাড় দেওয়া ছাড়া আপনি কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু আশা করি, বড় কোনো ছাড় দিতে হবে না, যেমনটা লোকে বলে বেড়াচ্ছে।’

খুনীকে ছাড় নয়

ট্রাম্পের কথার পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন খুনিকে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়।’ পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের সমালোচনা করে জেলেনস্কি ‘একজন খুনির’ সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা না করতে তাঁর প্রতি আহ্বান জানান। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একে পোস্টে লেখেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে অসম্মান করেছেন। যেদিন তিনি শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউসে) ফিরে আসতে পারেন। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউস থেকে জেলেনস্কিকে চলে যেতে বলেন ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

বিশ্বনেতারা দুই ভাগ

হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বাগ্‌বিতণ্ডার পর বিশ্বনেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। কেউ ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন, কেউ ইউক্রেনকে সমর্থন জানানো অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। ইউক্রেনের প্রতি ‘নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন’ দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজও যত দিন প্রয়োজন ‘ইউক্রেনের পাশে থাকার’ কথা বলেছেন। কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোও ইউক্রেনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রাখবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ফ্রান্স, পোলান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সব দেশ ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন রাখবেন বলে জানিয়েছে।  

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন