ঢাকা, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১২ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ঢামেকের বহির্বিভাগে চিকিৎসা বন্ধ
Scroll
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া নামের আগে ডাক্তার পদবি নয়: হাইকোর্ট
Scroll
এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মারা গেছেন
Scroll
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে জিম্মি হওয়া ৮০ জনকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, নিহত হয়েছেন ১৩ জন
Scroll
দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ, একীভূতকরণ কিংবা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়
Scroll
সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন
Scroll
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকি আক্তারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মধ্যরাতে শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত

ওয়ান ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ভুল ছিল, হাসিনা আপসরফা করেছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০:৩৩, ৮ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ২১:০৮, ৮ মার্চ ২০২৫

ওয়ান ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ভুল ছিল, হাসিনা আপসরফা করেছিলেন

ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মার্কিন সরকারের নীতি এবং ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভূমিকায় বিরাট ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত ড্যানিলোভিচ আজ শনিবার সকালে এক আলোচনায় এ মন্তব্য করেছেন।

‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে ওই আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংস্থার চেয়ারম্যান মুনিরা খান। এরপর সঞ্চালকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক ওই দুই মার্কিন কূটনীতিক। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অতিথিদের প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁরা।

আলোচনায় সাবেক দুই মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের ভূমিকা এবং নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করেন।

উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, ‘আমরা একটি ছোট সংগঠন গঠন করি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে সচেতন করার জন্য কাজ করি। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এই উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। বিশেষ করে গত ১০ বছরে ভিসা না পাওয়ায় আমি বাংলাদেশ সফর করতে পারিনি।’

জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘(মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে) আমি প্রথম স্বীকার করছি ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিরাট ভুল করেছিল। তবে রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস কিংবা আমার সহকর্মীরা এক–এগারো ঘটাননি। আমি মনে করি না, কোনো গোপন “কফি গ্রুপ” সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাংলাদেশের জনগণকে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছিল। ’

তিনি বলেন, ‘৯০ সালে গণতন্ত্রের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছিল। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে হলে মৌলিক সংস্কার দরকার। তখন জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ কী চায়, তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। আমরা নাগরিক সমাজ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু আমরা সেনাবাহিনীর কথাই বেশি শুনেছি। সম্ভবত সে কারণেই গণতন্ত্রের উত্তরণ নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি।’

সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে নিজেদের ভুলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ঢাকায় তিনবার কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে জন ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় ভুলটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র দেশ হিসেবে এবং ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস হিসেবে আমরাও নির্বাচনের সময়সীমার ওপরই বেশি জোর দিয়েছিলাম। নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের দীর্ঘ সময়ের রায় (ম্যান্ডেট) ছাড়া কোনো সরকার পরিচালিত হতে পারে না। আর নির্বাচিত সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত। ওই সময় মৌলিক কিছু সংস্কার সাধনের প্রয়োজন ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কারের এজেন্ডাও এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু একটা সময়ে এসে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নির্বাচনের আয়োজন করে দায়িত্ব হস্তান্তরই তাদের প্রধান অগ্রাধিকার।’

তিনি বলেন, ‘এরপরেই তখনকার সরকার রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে তাদের সব ধরনের প্রভাব হারিয়ে ফেলল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সেনা সরকারের বোঝাপড়াটা হয়েছিল গোপনে। তাই আমাদের জানা সম্ভব ছিল না সাবেক প্রধানমন্ত্রী কোন শর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আপসরফা করেছিলেন। আমরা এর কোনো পক্ষ ছিলাম না।  তখন আমাদের ধারণা হয়েছিল যে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছিল এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবেন।’

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক আরও বলেন, ‘ইতিহাস ভুল প্রমাণ করল। আমাদের যেটা বলা হয়েছিল তার ভিত্তিতে ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। আমরা দেখলাম ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অধোগতি ঘটতে থাকল, যার চূড়ান্ত রূপ দেখলাম ২০২৪ সালের নির্বাচনে।’

জন ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এখন সংস্কারের বিষয়ে যা করছে, তা হলে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের প্রতিফলন। এখনকার জটিল পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করে বেসামরিক সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরে বর্তমান সরকার সংস্কারের বিষয়ে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন