শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৮, ৫ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৩২, ৫ এপ্রিল ২০২৫
ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকর কৌশল খুঁজে বের করা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে কয়েকটি দেশ।
এদিকে বাংলাদেশকেও পরিস্থিতি বুঝে জুতসই কোনো কৌশল নিতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সম্পর্কিত বৈঠক ছাড়াও দ্রুত আলোচনার নানা সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলাসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানো সম্ভব। এর মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমলে শুল্ক কমানোর বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কাঠামো কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে অন্তত ছয়টি বিকল্প নিয়ে চিন্তা করছে সরকার।
আগামীকাল রোববার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে এসব বিকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার একটা জুতসই সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা এবং দু’জন বাণিজ্য বিশ্লেষককে নিয়ে আগামীকাল বৈঠকে বসবেন তারা। সবার মতামত পাওয়ার পর আরও পর্যালোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।’
সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরামর্শ
মার্কিন শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাকে এ মুহূর্তে সহজ বিকল্প মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।
প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে তাল মেলানো
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন ও ভিয়েতনাম। চতুর্থ অবস্থানে ইন্দোনেশিয়া এবং পঞ্চম ভারত। শীর্ষ দশের বাকি পাঁচ দেশ হচ্ছে যথাক্রমে মেক্সিকো, হুন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম পরিস্থিতি মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণে গত বৃহস্পতিবারই উচ্চ পর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
এদিকে চীনও মার্কিন পণ্যে পাল্টা ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীরা নতুন শুল্ক ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
নতুন ঘোষণায় বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পণ্যে শুল্ক দাঁড়াবে ৬১ শতাংশ। প্রধান রপ্তানিকারক চীনের পণ্যে শুল্কহার দাঁড়াবে ৬৯ শতাংশ। প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের মধ্যে কম্বোডিয়ার পণ্যে শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৬৪ শতাংশ। ভারতীয় পণ্যে ৪১ শতাংশ। পাকিস্তানি পণ্যে দাঁড়াবে ৪৪ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা এবং মিয়ানমারের পণ্যে ৫৯ শতাংশ হারে। বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৫২ শতাংশ।
তুলা আমদানি বাড়ানোর পক্ষে মত
তুলার প্রধান ব্যবহার হয়ে থাকে টেক্সটাইল মিলগুলোতে। এই মিলগুলো রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ সমজাতীয় অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ ছাড়া দেশীয় বাজারে চাহিদার বস্ত্র ও পোশাকও জোগান দেয় তারা। জানতে চাইলে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক এবং লিটিল গ্রুপের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম গতকাল সমকালকে বলেন, দেশে চাহিদার সব তুলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করলে কোনো অসুবিধা নেই।
মার্কিন তুলায় তৈরি পোশাক সে দেশে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের দাবিটিও জোরালোভাবে করা যাবে। পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা যদি আমদানি না করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি দেশীয় এসব বস্ত্র ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি খুব বেশি থাকার কথা নয়। তখন শুল্কও সহনীয় হারে নেমে আসবে।