শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২১, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
তিন কলেজে আট মাসে ১১ সংঘর্ষ
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। গত আট মাসে এই দুই কলেজ একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। কখনও কোচিং সেন্টারের সিঁড়িতে ধাক্কা লাগা, কখনও বাসে ওঠা নিয়ে বাকবিতণ্ডা, আবার কখনও ফেসবুক পোস্ট নিয়ে উত্তেজনা—সব কিছুতেই রক্ত ঝরেছে।
এরমধ্যে ১৫ এপ্রিল ফেসবুকে বাকবিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ২০ ফেব্রুয়ারি সাতজন আহত, ৯ ফেব্রুয়ারি সিটি ও আইডিয়াল কলেজের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ১৯ নভেম্বর ও ২০ নভেম্বর বাস ভাঙচুর ও পাল্টা হামলায় ৩৭ জন আহত, ১০ সেপ্টেম্বর আইডিয়াল কলেজের সাইনবোর্ড খুলে নেওয়া, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২৫ জানুয়ারি, ১৯ জানুয়ারি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বা সংঘর্ষ অন্যতম।
সর্বশেষ সংঘর্ষটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার। দুপুরের দিকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে সংঘর্ষে। ইটপাটকেল ছোড়া, লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস—সব মিলিয়ে সায়েন্স ল্যাব ও আশপাশের পুরো এলাকা রূপ নেয় যুদ্ধক্ষেত্রে। অল্প সময়েই এই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে নিউমার্কেট, মিরপুর রোড, আজিমপুর পর্যন্ত।
একজন সাধারণ নারী যাত্রী, যিনি একটি বাসে ছিলেন, আতঙ্কে চিৎকার করে বলেন—"অরে মাইরা ফালাইবো গো, ও আল্লাহ! অরে বাঁচান!" তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাস থেকে নামিয়ে আনা হয়। ঘটনাটি ভিডিও আকারে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় সোমবারের একটি ঘটনার জেরে। অভিযোগ ওঠে, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে। যদিও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীদের কারও গায়ে কোনো কলেজের ইউনিফর্ম ছিল না। তবুও পরদিন প্রতিশোধ নিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজে গিয়ে হামলা চালায়, যা পাল্টা আক্রমণে রূপ নেয়।
সংঘর্ষে একাধিক বাসে ভাঙচুর, শিক্ষার্থীদের ছুরিকাঘাত ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। পুলিশ পরে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে। বিকেল ৩টার দিকে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরলেও বেলা আড়াইটায় আবারও নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এফ এম মোবারক হোসাইন বলেন, “ছাত্র নামধারী কিছু সন্ত্রাসী অতর্কিতে আমাদের কলেজে হামলা চালিয়েছে। আমরা জাতির কাছে এর বিচার চাই।”
তিনি আরও বলেন, “ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যরা কলেজের সামনেই ছিলেন। তারা যদি সময়মতো পদক্ষেপ নিতেন, তাহলে এত বড় ভাঙচুর হতো না।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানিয়েছেন, তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের বারবার সংঘর্ষ ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি বলে জানান নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা এক্সপ্রেস/ বিডি