ঢাকা, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ শা'বান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে সমুদ্র ও স্থলবন্দরে ফল খালাস বন্ধ
Scroll
জানুয়ারিতে সড়কে ঝরেছে ৬০৮ প্রাণ; রোড সেফটির প্রতিবেদন
Scroll
পুরোপুরি কার্যকর ১২ ব্যাংক, বাকিগুলো খুঁড়িয়ে চলছে: অর্থ উপদেষ্টা
Scroll
রাজনৈতিক দলগুলো সাফল্য চাইলেও সরকার সফল হতে পারছে না: মান্না
Scroll
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২
Scroll
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত প্রায় ৬২ হাজার
Scroll
দেনা আদায়ে সরকারকে চাপ বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের, লোডশেডিংয়ের শঙ্কা
Scroll
বিশ্ব ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু
Scroll
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে: খন্দকার মোশাররফ
Scroll
আগামীতে টঙ্গীতে ইজতেমা না করার শর্তে এবছর অনুমতি পেলেন সাদপন্থীরা; মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন
Scroll
ইউএসএআইডির প্রশাসক নিযুক্ত হলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও
Scroll
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প, তবে চীনের ওপর নয়
Scroll
ঝাউদিয়া থানার দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ
Scroll
সুদানে ভয়াবহ সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ৬৫
Scroll
২০৫ ভারতীয়কে দেশে পাঠাল আমেরিকা
Scroll
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে দুদকের চিঠি

কোথায় খুঁজে পাবো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:০৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৯:০৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

কোথায় খুঁজে পাবো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭২ সাল থেকে ১৪ই ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করে আসছে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষনা করেছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছিল। তারা তাদের এ–দেশীয় দোসরদের নিয়ে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের বহু কৃতী সন্তানকে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বরেই প্রায় ২০০ জনের মতো বুদ্ধিজীবীকে নিজবাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় চোখে কাপড় বেঁধে। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া ও রাজারবাগসহ অন্যান্য আরও অনেক জায়গার নির্যাতনকেন্দ্রে নিয়ে তাদের ওপর বীভৎস নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মিরপুর ও রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে লাশ ফেলে দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক ডক্টর মুনীর চৌধুরী, ডাক্তার মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, ডাক্তার আলীম চৌধুরী, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, আনম গোলাম মোস্তফা, সেলিনা পারভীন কী উজ্জ্বল আর নক্ষত্রপ্রতিম কিছু দেশবরেণ্য নাম! ঘাতকেরা অকালে নিভিয়ে দেয় যাদের জীবনপ্রদীপ।

ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড. জিসি দেব, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল খায়ের; এমন শিক্ষক কি যুগে যুগে আসেন? আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ গানের কালজয়ী সুরকার আলতাফ মাহমুদের মতো সংগীতব্যক্তিত্ব আর কি খুঁজে পাওয়া যাবে? স্বাধীনতার বেদিমূলে অকালেই বিসর্জিত হয়েছে তাদের মূল্যবান জীবন। শুধু ঢাকা কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজসহ অগণিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হয়েছে।

সারাদেশে হত্যা করা হয় বুদ্ধিজীবীদের

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেগম মুশতারী শফি এবং ডাক্তার শফী মুক্তিযুদ্ধের দীপশিখা জ্বালিয়ে দেয়া প্রথম সারির সাংস্কৃতিক কর্মী। কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ডাক্তার শফীকে! বেগম মুশতারী শফী তার ‘স্বাধীনতা আমার রক্ত ঝরানো দিন’ স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থে ভাই ও স্বামীসহ স্বজনহারানোর মর্মস্পর্শী বিবরণ দিয়েছেন। বাংলাপিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়, ১৪৯ জন। ইতিহাসবিদরা বলছেন, সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা না করে যদি জনসংখ্যা আর মৃত্যুর হার হিসেবে হিসাব করা হয় তাহলে অন্যান্য ঢাকার বাইরে জেলাগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক বুদ্ধিজীবী মারা গেছেন কিন্তু তাদেরকে আসলে সেভাবে স্মরণ করা হয় না। বাংলাপিডিয়ার হিসাবে, কুমিল্লায় মারা গেছে ৮৬ জন, যশোরে ৯১, রংপুরে ৭২, দিনাজপুর ৬১, পাবনা ৫৩, ময়মনসিংহ ৭৫, ফরিদপুর ৪৩, চট্টগ্রাম ৬২, খুলনা ৬৫, বরিশাল ৭৫ এবং রাজশাহীতে ৫৪ জনসহ সব মিলিয়ে বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ১১শ ১১ জন।

প্রধানত দুই পর্যায়ে হত্যাকাণ্ড

বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়েছিল প্রধানত দুটি পর্যায়ে। রাজধানীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষক, চিকিৎসকসহ অনেককে হত্যা করে। এরপর সারা দেশেই বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক, আইনজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা–মনন সৃজনশীলতায় যুক্ত বহুজনকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সুপরিকল্পিতভাবে হানাদাররা তালিকা করে রাজধানীতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল।

কিভাবে লাশ শনাক্ত

ইতিহাসের নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের পর খবর পেয়ে স্বজনরা ছুটে যেতে থাকেন রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, ক্ষত-বিক্ষত শত-শত লাশ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকৃত করে দেওয়ায় স্বজনদের পক্ষে বুদ্ধিজীবীদের লাশ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তখন লাশের সঙ্গে থাকা কাপড় কিংবা হাতঘড়ি দেখে শনাক্ত করাটা স্বজনদের একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। যাদের চেহারা অক্ষত ছিল, তাদের সহজেই শনাক্ত করা হয়েছিল। বিশেষ করে, যাদের পরনে কাপড় ছিল, তাদের সহজেই দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। তবে কারও কারও লাশে থাকা জন্মচিহ্ন, হাতঘড়ি দেখে স্বজনরা শনাক্ত করেছিলেন। অনেক লাশই হারিয়ে যায়। কিছু লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কোনও কোনও লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। তাই তাদের চেনা অসম্ভব ছিল।

কতজন শহীদ হয়েছিলেন

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নে নেওয়া উদ্যোগ স্থগিত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে ২০২০ সালে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জাতীয় কমিটির একটি উপ-কমিটি ছিল। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত চার বছরে মন্ত্রণালয় ৫৬০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম তালিকাভুক্ত করে চারটি গেজেট প্রকাশ করে। তবে আপাতত তার কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। 

‘বাংলাদেশ’ প্রামাণ্যচিত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা বলা হয় ১ হাজার ১০৯ জন। আর বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়, যাদের মধ্যে ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ১৩ জন সাংবাদিক, নয়জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, পাঁচজন প্রকৌশলী এবং অন্য দুজন। মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের অনেকে অবশ্য মনে করেন, মোট শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ১৯৭২ সালে গঠিত 'বুদ্ধিজীবী নিধান তাথ্যানুসন্ধান কমিটির' সদস্যরা নিহত হওয়া ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীর প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থে ৩২৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা রয়েছে। তবে তালিকাটি সম্পূর্ণ নয় বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০শে ডিসেম্বর ১৯৭১-এ, মুজিবনগর সরকারের এক মুখপাত্র জানান, ১৬ই ডিসেম্বরে আত্মসমর্পনের পূর্বে পাক-বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা মিলে ৩৬০ জন বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে। ১৯৯৪ সালে পুণ:মুদ্রিত বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবি সম্পর্কিত তথ্যকোষ ‘শহীদ বুদ্ধিজীবি কোষগ্রন্থ’- এ শহীদ বুদ্ধিজীবিদের সংখ্যা ৩২৮ জনের কথা উল্লেখ আছে। বইয়েই বলা হয়েছে এই তালিকাটি সর্বমোট নয় এমনকি সম্পূর্ণ নয়। এই তথ্যকোষে শহীদ আখ্যায়িত হয়েছেন তারা যাদের পাক-বাহিনী এবং দোসরেরা বিভিন্ন সময় নির্বিচারে হত্যা করেছিল। যারা ২৫শে মার্চ ১৯৭১ থেকে ৩১শে জানুয়ারী ১৯৭২ সময়কাল থেকে নিঁখোজ। লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, সংগীত শিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, উকিল, চিকিৎসক, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি-বেসরকারি কর্মী, নাট্য-কর্মী, জনসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের বুদ্ধিজীবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ’ নামক প্রামান্য চিত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ৬৩৭ জন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক, ২৭০ জন সেকেন্ডারি স্কুলশিক্ষক এবং ৫৯ জন কলেজ-শিক্ষককে হত্যা করা হয়।

বুদ্ধিজীবীদের লাশের সন্ধান

১৮ই ডিসেম্বরে একদল সাংবাদিক ঢাকার পশ্চিমে, রায়ের বাজার এলাকায় পচনশীল, ক্ষত-বিক্ষত লাশের একটি গণ-কবরের সন্ধান লাভ করে। জাতির মেধাবী ব্যক্তিবর্গের দেহগুলো অত্যাচারের সুস্পষ্ট চিহ্ন নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, একে-অন্যের নীচে চাপা পড়ে ছিল। লালমাটিয়ায় শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাংবাদিকরা একটি বন্দীশালা আবিস্কার করে, যা ছিল রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ এবং কামালউদ্দিন, চিকিৎসক ফজলে রাব্বী, আব্দুল আলিম চৌধুরী, আবুল খায়ের, সাংবাদিক মুহাম্মদ আখতার-পচনশীল লাশগুলো পরিবার কর্তৃক সনাক্ত করা হয় সেদিনই। সাংবাদিক সেলিনা পারভিন এর লাশ সনাক্ত করা হয় পরের দিন। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, সিরাজুল হক, ফাইজুল মহি এবং চিকিৎসক গোলাম মুর্তোজা, আজহারুল হক, হুমায়ুন কবীর ও মনসুর আলীর লাশ পরবর্তীতে চিহ্নিত করা হয়। লাশ সনাক্তকরণের সময় শহীদ বুদ্ধিজীবিদের পরিবারের সদস্যদের অনেকেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছিলেন।

এরকম আরো বধ্যভূমি ছিল মিরপুর এবং রায়ের বাজার এলাকায়, তেঁজগাঁও এর কৃষি বর্ধিতকরণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহাখালীর টি.বি. হাসপাতাল সহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। অনেক লাশই পরবর্তীতে সনাক্তকরণের পর্যায়ে ছিলনা। 

বুদ্ধিজীবী যাঁদের হারিয়েছি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ: এ.এন.এম. মুনির চৌধুরী, ডা: জি.সি. দেব, মুফাজ্জাল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, জোতীর্ময় গুহ ঠাকুর, আব্দুল মুক্তাদীর, এস.এম. রাশিদুল হাসান, ডা: এ.এন.এম ফাইজুল মাহি, ফজলুর রহমান খান, এ.এন.এম মনিরুজ্জামান, ডা: সেরাজুল হক খান, ডা: শাহাদাত আলী, ডা: এম.এ. খায়ের, এ.আর. খান কাদিম, মোহাম্মদ সাদিক, শারাফত আলী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, আনন্দ পবন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ: প্রফেসর কাইয়ূম, হাবিবুর রহমান, শ্রী সুখ রঞ্জন সমদ্দার এম.সি.এ, মশিউর রহমান, আমজাদ হোসেন, আমিনুদ্দিন, নাজমুল হক সরকার, আব্দুল হক, সৈয়দ আনোয়ার আলী, এ.কে. সর্দার।

সাংবাদিক: সিরাজুদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, খন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দিন আহমেদ, এ.এন.এম. গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সরকার আব্দুল মান্নান (লাদু), নাজমুল হক, এম. আখতার, আব্দুল বাশার, চিশতী হেলালুর রহমান, শিবসাধন চক্রবর্তী, সেলিনা আখতার।

চিকিৎসক: মো: ফজলে রাব্বী, আব্দুল আলীম চৌধুরী, সামসুদ্দিন আহমেদ, আজহারুল কবীর, সোলায়মান খান, কায়সার উদ্দিন, মনসুর আলী, গোলাম মর্তোজা, হাফেজ উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আব্দুল জব্বার, এস.কে. লাল, হেম চন্দ্র বসাক, কাজী ওবায়দুল হক, আল-হাজ্ব মমতাজউদ্দিন, ঘাশিময় হাযরা, নড়েন ঘোষ, জিকরুল হক, শামসুল হক, এম. রহমান, এ. গফুর, মনসুর আলী, এস.কে সেন, মফিজউদ্দিন, আমূল কুমার চক্রবর্তী, আতিকুর রহমান, গোলাম সারওয়ার, এর.সি. দাস, মিহির কুমার সেন, সালেহ আহমেদ, অনীল কুমার সিনহা, গুনীল চন্দ্র শর্মা, এ.কে.এম. গোলাম মোস্তফা, মাকবুল আহমেদ, এনামুল হক, এনসুর (কানু), আশরাফ আলী তালুকদার, লেফ: জিয়াউর রহমান, লেফ.ক. জাহাঙ্গীর, বাদল আলম, লেফ: ক. হাই, মেজর রেজাউর রহমান, মেজর নাজমুল ইসলাম, আসাদুল হক, নাজির উদ্দিন, লেফ: নুরুল ইসলাম, কাজল ভাদ্র, মনসুর উদ্দিন।

শিক্ষাবিদ: জহির রায়হান, পূর্নেন্দু দস্তিদর, ফেরদৌস দৌলা, ইন্দু সাহা, মেহেরুন্নিসা। 

শিল্পী ও পেশাজীবি: আলতাফ মাহমুদ, দানবীর রানাদা প্রসাদ সাহা, জোগেষ চন্দ্র ঘোষ, ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, সামসুজ্জামান, মাহবুব আহমেদ, খুরশিদ আলম, নজরুল ইসলাম, মাহফুজুল হক চৌধুরী, মহসিন আলী, মুজিবুল হক।

বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি রক্ষায় উদ্যোগ কতটা?

বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি এবং তাদের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে খুব বেশি কাজ হয়নি বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আবার অনেকেই মনে করেন যে, এ বিষয়ে কাজ হলেও আসলে সেগুলো একসাথে সংকলিত হয়নি সেভাবে। অনেক বিশেষজ্ঞই অভিযোগ বিভিন্ন সময় অভিযোগ তুলেছেন, স্মৃতি সংরক্ষণ বা তালিকা নিয়ে কাজ হয়নি তা নয়, তবে সেগুলো বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে খুব বড় উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বাংলা একাডেমি কথ্য ইতিহাস তৈরির একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে সেগুলো সংকলিত হয়নি। এ বিষয়ে সরকারকে বড় উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতি জাগিয়ে রাখতে তাঁদের বেশ কিছু নিদর্শন সাজিয়ে রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দুই নম্বর গ্যালারির একাংশে রয়েছে ২৫ মার্চ রাত ও এরপরে যে বুদ্ধিজীবীরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের প্রতিকৃতি, পরিচিতি ও বিভিন্ন নিদর্শন। এর মধ্যে আছে কবি মেহেরুন্নেসার প্রতিকৃতি, তাঁর লেখা কবিতার খাতা, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার নোটবুক, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ডায়েরি, চিকিৎসক জিকরুল হকের ব্যবহৃত কোটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অনেক স্মারক।

জাদুঘরের চার নম্বর গ্যালারির একটি বড় অংশে মূলত ডিসেম্বরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে নিয়ে করা হয়েছে একটি কর্নার। এখানেই আছে শহীদ মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, আনোয়ার পাশা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীসহ অনেকের প্রতিকৃতি ও স্মৃতিময় নিদর্শন। শহীদ সেলিনা পারভিনের প্রতিকৃতির পাশেই আছে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা শিলালিপির একটি কপি। এর পাশে আছে রায়েরবাজার বধ্যভূমির ইটখোলায় পড়ে থাকা তাঁর হাত বাঁধা মরদেহের ছবি। ডা. আলীম চৌধুরীর ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের লেখা ইতিহাস কথা কও বইয়ের পাণ্ডুলিপি। ড. রাশীদুল হাসানের কলম। বিজ্ঞানী ড. আমিন উদ্দিনের ব্যবহার করা একটি কাঁচি। এ রকম বহু নিদর্শনের পাশাপাশি রাখা আছে আলোকচিত্র, সেই সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কাটিংসহ অনেক রকম তথ্যউপাত্ত।

বিশ্বজুড়ে শহীদদের স্মৃতি যেভাবে ধরে রাখা হয়

বিশ্বব্যাপী আলোচিত একাধিক স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এর মধ্যে যে কয়টি আগ্রহের জায়গায় শীর্ষে রয়েছে, তার মধ্যে একটি কিগালি গণহত্যা স্মৃতিসৌধ-১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডান গণহত্যার স্মরণে স্থাপিত। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের দেহাবশেষ সেখানে সমাহিত করা হয়েছে। কিগালি মেমোরিয়াল সেন্টার আন্তর্জাতিক মানের। এটি আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের যেমন আগ্রহের জায়গা, একইসঙ্গে গবেষকদের আগ্রহ ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েই এটি ডিজাইন করা হয়েছে। অডিওভিজ্যুয়াল এবং জিপিএস ডকুমেন্টেশন, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির সাক্ষ্য রেকর্ড করে বাজানোর মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত করে রাখা হয়েছে এই স্মৃতিসৌধকে। আরুশার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি স্থানীয় গাকাকা আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়গুলো ‍তুলে ধরা আছে এখানে।

বেলজিয়ামের মেনিনগেট মেমোরিয়াল- সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধ স্মৃতিসৌধগুলির মধ্যে একটি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক সৈন্য সম্মুখভাগে যাওয়ার পথ হিসেবে এই জায়গাটিকে বেছে নিয়েছিল। এখনও রোজ সন্ধ্যায় এখানে বিহগল বেজে ওঠে, তখন আশেপাশের সব যানবাহন যে যার জায়গায় থেমে যায়। পোাল্যান্ডের আউশভিটস-বারকেনাউ মেমোরিয়াল অ্যান্ড মিউজিয়ামের কথাও উল্লেখযোগ্য, যেখানে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ দর্শনার্থী প্রায় ২০ লাখের উপস্থিতির কথা সর্বজনবিদিত। ১৯৪৭ সালে এটি একটি স্মৃতিসৌধে পরিণত হওয়ার পর থেকে এখানে এত বেশি দর্শনার্থী এসেছে যে, ব্যারাকের কংক্রিটের সিঁড়িগুলো অতিরিক্ত পদচারণার মসৃণ হয়ে ক্ষয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এত গণহত্যা ও দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গণকবর এবং বদ্ধভূমি থাকলেও এসব জায়গায় বিদেশ থেকে দর্শনার্থী আসা দূরে থাক, দেশের মানুষই খোঁজ রাখে না।

আরও পড়ুন