ঢাকা, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ শা'বান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে সমুদ্র ও স্থলবন্দরে ফল খালাস বন্ধ
Scroll
জানুয়ারিতে সড়কে ঝরেছে ৬০৮ প্রাণ; রোড সেফটির প্রতিবেদন
Scroll
পুরোপুরি কার্যকর ১২ ব্যাংক, বাকিগুলো খুঁড়িয়ে চলছে: অর্থ উপদেষ্টা
Scroll
রাজনৈতিক দলগুলো সাফল্য চাইলেও সরকার সফল হতে পারছে না: মান্না
Scroll
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২
Scroll
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত প্রায় ৬২ হাজার
Scroll
দেনা আদায়ে সরকারকে চাপ বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের, লোডশেডিংয়ের শঙ্কা
Scroll
বিশ্ব ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু
Scroll
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে: খন্দকার মোশাররফ
Scroll
আগামীতে টঙ্গীতে ইজতেমা না করার শর্তে এবছর অনুমতি পেলেন সাদপন্থীরা; মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন
Scroll
ইউএসএআইডির প্রশাসক নিযুক্ত হলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও
Scroll
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প, তবে চীনের ওপর নয়
Scroll
ঝাউদিয়া থানার দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ
Scroll
সুদানে ভয়াবহ সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ৬৫
Scroll
২০৫ ভারতীয়কে দেশে পাঠাল আমেরিকা
Scroll
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে দুদকের চিঠি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ পরিক্রমা: ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৩৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৯:০২, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ পরিক্রমা: ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১

দেশের স্বাধীনতার ২৪ বছর আগে ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টে ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা। একই সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানদের সাম্প্রদায়িকতার উপর ভিত্তি করে দেশটিকে দুই ভাগ করে দেয় তারা। দুটি দেশের নামকরন করা হয় ভারত ও পাকিস্তান। তখন বর্তমান বাংলাদেশ ছিলো পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা চলে যাওয়ার পর আবারও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় বাংলাদশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। নতুন শোষকেরা তখন পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত, সেসময় পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানকে কলোনির মতো মনে করেছিল তারা। আর এটি উপলব্ধি করতে বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়েনি তখনকার পূর্ব পাকিস্তানিদের। 

এরপর নিজেদের শৃঙ্খলমুক্ত করতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শুরু করে গণসংগ্রাম। নানা পর্যায় অতিক্রম করে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনা হয় মহান স্বাধীনতা, আর বাঙ্গালী হয় পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেসময়কার রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙ্গালীর কাঙ্খিত বিজয়।

এবার জেনে নেয়া যাক, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনাবলী।

৩রা জুন, ১৯৪৭

ভারতে, ব্রিটেনের সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা সম্বলিত ‘হোয়াইট পেপার' বা 'শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করে তারা। যেখানে ভারতবর্ষ বিভক্তির রূপরেখাও তুলে ধরা হয়েছিলো। এই বৈঠকে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনায় সম্মতি প্রকাশ করেন সব দলের নেতারা।

১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৭

এদিন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অর্থাৎ ধর্মের ভিত্তিতে দু’টি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা হয়- নাম হয় ভারত এবং পাকিস্তান।

১৭ ই আগস্ট, ১৯৪৭

পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন মুসলিম লীগ প্রধান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, একইদিন পাকিস্তানের করাচিতে গভর্নর জেনারেল হিসেবে শপথ নেন তিনি। সেদিন ঢাকার বিভিন্ন সড়কে আতশবাজিও পোড়ানো হয়।

৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭

এদিন গঠিত হয় পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগের পূর্ব পাকিস্তানের সাংগঠনিক কমিটি। এরপর মুসলিম লীগের রাজনীতির বিপরীতে ক্রমে শক্তিশালী হতে থাকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি দল গঠনের আলোচনা। যার প্রেক্ষাপটে প্রথমে ছাত্রলীগ এবং পরে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।

৪ঠা জানুয়ারি,১৯৪৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগ। নতুন এ দলের নাম রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে মুসলিম অংশটি বাদ দিয়ে এর নাম রাখা হয় শুধু ছাত্রলীগ।

২৪শে মার্চ, ১৯৪৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। জিন্নাহর বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই এর প্রতিবাদ জানায় কার্জন হলে উপস্থিত ছাত্রদের একটি অংশ।

২৩ শে জুন, ১৯৪৯

ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত এক সভায় গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাবে দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’, যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীত হয়ে সেই দলটিই এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

২৩ শে জুন, ১৯৪৯

ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত এক সভায় গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’, যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পরবর্তীতে সেই দলের নাম পরিবর্তন হয়ে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২

২১শে ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয় সাধারণ ধর্মঘট। প্রতিহত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন সরকার। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদে যাওয়ার চেষ্টা করে সমবেত ছাত্ররা। এ সময় ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ এবং গুলি বর্ষণ করে পুলিশ, ঘটনাস্থলেই মারা যান আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ এবং আব্দুল জব্বার। এরপর হাসপাতালে মারা যান আব্দুস সালাম।

২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩

ঢাকা মেডিকেল কলেজের গেটের পাশে অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাজারো মানুষ। সেদিন সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সভা সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করলেও, শোকের প্রতীক হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ একই সাথে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়।

১০ই মার্চ, ১৯৫৪

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট।

৩রা এপ্রিল, ১৯৫৪

এদিন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রাদেশিক শাসনভার গ্রহণ করেন, মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট।

৩০শে মে, ১৯৫৪

মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ৩০মে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।

৭ই মে, ১৯৫৪

বাংলাকে একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে প্রস্তাব গ্রহণ করে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট।

৩রা ডিসেম্বর, ১৯৫৫

ভাষা আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অন্যতম দাবি ছিল বাংলা ভাষার প্রসার ও গবেষণার জন্য একটি স্বতন্ত্র একাডেমি স্থাপন করা। অবশেষে ৩রা ডিসেম্বরই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলা একাডেমী।

২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬

১৯৫৬ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী প্রথম শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ গেটের পাশে শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার।

২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হয়।

১৯৬২ সাল

১৯৬০ সালের প্রথম দিকে শরিফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৬২ সালে। কিন্তু বৈষম্যমূলক বলে এ শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। তাদের লক্ষ্য ছিল শিক্ষাকে সর্বজনীন অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। 

১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৬২

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৪৪ ধারার মধ্যে ১৭ই সেপ্টেম্বর পূর্বপাকিস্তানে দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়। ঢাকার হাইকোর্টের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে নিহত হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা এবং বাবুল। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, এ শিক্ষা আন্দোলন নিঃসন্দেহে ইতিহাসের বাঁক ফেরানো ঘটনা। তবে নিছক শিক্ষার দাবিতেও এটা সীমাবদ্ধ ছিল না।

২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩

১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপনের পর ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। এর উদ্ভোধন করেন ভাষা শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম।

৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শোষণ বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু সেটি তখন গৃহীত হয়নি।

৬ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

পাকিস্তানকে দু’টি অংশ বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ছয় দফা দাবি আনা হয়েছে বলে দাবি করে পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি পত্রিকা।

১১ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সামনে ছয় দফা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরেন শেখ মুজিব।

৩রা জানুয়ারি, ১৯৬৮

এদিন ৩৫জনকে আসামী করে দায়ের করা আগরতলা নামক ষড়যন্ত্র মামলাটি। এর আনুষ্ঠানিক নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার। 

৬ই জানুয়ারি, ১৯৬৮

এদিন ২ জন সিএসপি অফিসারসহ মোট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ায়, প্রথমে আসামিদেরকে ‘দেশরক্ষা আইন' থেকে মুক্তি দেয়া হলেও পরবর্তীতে 'আর্মি, নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স অ্যাক্টে’তাদের বিরুদ্ধে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে শুরু হয় বিচার কার্যক্রম।

১৯৬৯-১৯৬৯ সালের শুরুতে পূর্ব-বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের মুখে সামরিক শাসন জারি করে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খান। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি।

২০শে জানুয়ারি, ১৯৬৯

পুলিশের গুলিতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ মৃত্যুবরণ করেন। এসময় আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে মিছিল করে তার সহযোদ্ধারা। পরে শেরে বাংলা নগর ও মোহাম্মদপুরের সংযোগ স্থলে আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আসাদগেট।

১৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯

১৫ই ফেব্রুয়ারি বন্দি থাকা অবস্থায় ঢাকার কুর্মিটোলা সেনানিবাসে প্রহরার দায়িত্বে নিয়োজিত পাকিস্তানী সৈনিক মঞ্জুর শাহর ছোড়া রাইফেলের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৭ নম্বর আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যাকাণ্ডের পরই তুঙ্গে উঠে যায়, আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নানা কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। অতিথি ভবনে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এস এ রহমান ও প্রধান সরকারি কৌঁসুলি মঞ্জুর কাদের। ২জনই পালিয়ে প্রাণ বাঁচালেও পুড়ে যায় মামলার কিছু নথিপত্র। এরপর গণআন্দোলনের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় আইয়ুব খানের সামরিক সরকার।

১২ই নভেম্বর, ১৯৭০

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে ইতিহাসের অন্যতম প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভোলার এই সাইক্লোনকে গুরুত্ব না দেয়ায় তার সরকারের প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল।

৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭০

তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালে। সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ।

১লা মার্চ, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান।

২রা মার্চ, ১৯৭১

এদিন কারফিউ ভেঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে আয়োজিত ছাত্র-জনতার বিশাল এক সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তলন করেন তৎকালীন ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব ও ডাকসু নেতারা।

৭ই মার্চ, ১৯৭১

তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রায় ১৮ মিনিট ব্যাপী ভাষণ দেন শেখ মুজিবুর রহমান । ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও, মুলত সেখানেই শেখ মুজিব বলেছিলেন, "এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।

২৫শে মার্চ, ১৯৭১

পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামে গণহত্যার শুরু করে ২৫মার্চ মধ্যরাতে। এবং সেই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, তেজগাঁও বিমানবন্দর, মোহম্মদপুর, রায়েরবাজার, আজিমপুর, জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর নির্বিচার হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।

২৬শে মার্চ, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের লিখিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ হান্নান। এর আগে দুপুরেও পাকিস্তান রেডিওর চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে সেটি পাঠ করেছিলেন তিনি।

পরদিন ২৭শে মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রাতের অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে লিখিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। 
 

আরও পড়ুন