শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:৫১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৮:৫৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। নিজেদের কর্মে সবার প্রাণে, শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় তারা বেঁচে থাকেন চিরকাল। সাধারণ কারও মৃত্যু হলে পরিবার ছাড়া অন্য কেউ তাদের স্মরণ করে না। অথচ ‘কীর্তিমানের’ মৃত্যু হলে তার শরীরের অবসান হয় বটে, কিন্তু তার মহৎ কাজ তাকে বাঁচিয়ে রাখে অনন্তকাল। এ বছর দেশবরেণ্য এমনি কয়েকজনকে আমরা হারিয়েছি। তারা রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজন। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। বছর শেষে হারানোদের স্বরণেই এই প্রতিবেদন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী গত ১৬ জানুয়ারি রাত ১১টার কিছু সময় পর রাজধানীর কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ড. রেজোয়ান হোসেন সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাঈল জেলার এলাসিন গ্রামে। বাবা মরহুম আতিকুল হোসেন সিদ্দিকী। মা মরহুমা হাওয়া সিদ্দিকী। এসএসসি পাস করেন ১৯৬৮ সালে। বলতে গেলে তার পর থেকেই জীবন সংগ্রাম শুরু। ১৯৬৯ সালে করটিয়ার সাদত কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তার পড়াশোনা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। হুলিয়া নিয়ে তিনি চলে যান চট্টগ্রামে তার চাচা মোফাখখর হোসেন সিদ্দিকীর আশ্রয়ে। এরপর রেজোয়ান সিদ্দিকী চলে আসেন ঢাকায়।
পিনু খান
আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা পিনু খান গত ১৬ মার্চ রাত ১টায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। পিনু খান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সামছুল আলম বাবুর সহধর্মিণী এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. বাহাউদ্দিন আহমেদের পুত্রবধূ।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী গত ২ মে সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ জে মোহাম্মদ আলী ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বাদশ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা এম এইচ খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল। ১৯৮০ সালে তিনি হাইকোর্টে এবং ১৯৮৫ সালে আপিল বিভাগে অনুশীলনের জন্য তালিকাভুক্ত হন। ২৩ অক্টোবর ২০০১ সালে তিনি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন।
ছাত্রনেতা শফি আহমেদ
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা শফি আহমেদ গত ৩ জুন সন্ধ্যায় মারা যান। শফি আহমেদ জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় উপসম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে নেত্রকোনা-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।
হাকিমপুরী জর্দার মালিক মো. কাউছ মিয়া
দেশের শীর্ষ করদাতা ও হাকিমপুরী জর্দার মালিক মো. কাউছ মিয়া (৯৪) গত ২৪ জুন রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। মো. কাউছ মিয়ার জন্ম চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বরে। তিনি দীর্ঘদিন চাঁদপুর জেলা শহরের পুরান বাজারে ব্যবসা করেছেন। পরে হাজীগঞ্জে, সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ব্যবসা করেন।
গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান
জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে গত ৫ জুলাই জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম রাউণ্ড তিনি মারা যান। গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান দাবা খেলায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০২২ সালে তারাই প্রথম পিতা-পুত্র জুটি, যারা জাতীয় দাবা দলে ছিলেন।
কবি মাকিদ হায়দার
সত্তর দশকের অন্যতম কবি মাকিদ হায়দার গত ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টায় উত্তরার নিজ বাসায় মারা যান। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাবনার দোহারপাড়ায় মাকিদ হায়দারের জন্ম। তার পিতা মোহাম্মদ হাকিম উদ্দিন শেখ ও মাতা রহিমা খাতুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক মাকিদ হায়দার গণসংযোগ ও গণমাধ্যম বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। পাঁচ দশক ধরে সাহিত্যে একটানা ভূমিকা রেখে গেছেন মাকিদ হায়দার। নিজস্ব একটা ভাষায় কবিতা লেখেছেন, সেই ভাষা ছিল আধুনিক ও পরিমিত। মাকিদ হায়দারের উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে রয়েছে, ‘রোদে ভিজে বাড়ি ফেরা’ ‘আপন আঁধারে একদিন’ ‘রবীন্দ্রনাথ: নদীগুলা’ ‘বাংলাদেশের প্রেমের কবিতা’ ‘যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেনো আজ সুখে থাকে’ ‘কফিনের লোকটা’ ‘ও প্রার্থ ও প্রতিম’ ‘প্রিয় রোকানালী’ ‘মমুর সাথে সারা দুপুর’।
অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক গত ২৪ জুলাই রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একাধারে ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. মাহবুব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন। প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। গবেষণায় অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১৯৩১ সালের ৩১ জুলাই খুলনার দৌলতপুর গ্রামে শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক, ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ব্রজলাল একাডেমি থেকে ৩টি লেটারসহ আইএসসি, ১৯৫০ সালে বিএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৫০ সালে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে পুরকৌশল বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পাস করেন ও গোল্ড মেডেল পান। পরবর্তীতে দেশের খ্যাতিমান প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
প্রফেসর ড. গোলাম মুরশিদ
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক, গবেষক, আভিধানিক, প্রফেসর ড. গোলাম মুরশিদ গত ২২ আগস্ট মারা যান। ১৯৪০ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা গ্রামে জন্ম গোলাম মুরশিদের। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় দুই দশক তিনি অধ্যাপনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। গোলাম মুরশিদ ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন লন্ডনের বিবিসি বাংলা বিভাগে। এ ছাড়া ১৯৯১ সাল থেকে লন্ডনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তার জীবন ও জগৎ প্রসারিত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কাজের জন্য গোলাম মুরশিদ ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০২১ সালে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।
সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। চাঁদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দিয়ায় রুহুল আমিন গাজীর জন্ম হয়। তার বাবার নাম কফিল উদ্দিন এবং মা আয়েশা খাতুন। তিনি সাংবাদিকদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) চতুর্থবারের মতো সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রুহুল আমিন বিএফইউজের মহাসচিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমৃত্যু দৈনিক সংগ্রাম-এর চিফ রিপোর্টার ছিলেন
সাংবাদিক অঘোর মন্ডল
জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অঘোর মন্ডল পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও সব জায়গাতেই তার সমান বিচরণ। তিনি সংবাদ প্রকাশে নিয়মিত খেলাবিষয়ক কলাম লিখতেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেছেন কাজের সুবাদে। কলাম লিখছেন নিয়মিত। ‘এক্সট্রা টাইম’ ও ‘ইনজুরি টাইম’ তার উল্লেখযোগ্য বই।
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর গত ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের জন্ম ১৯২৯ সালে রাজবাড়ীর দাদুপুর গ্রামে। ১৯৫২ সালে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ২০০৫ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। পেশাজীবনে আব্দুল গফুর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুমের (ইসলামিক একাডেমি) সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। পরে এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুবকল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আবুজর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরী
সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরী গত ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টায় রাজধানীর উত্তরা বাংলাদেশ মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ছেড়ে দেন। তিনি ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মতিয়া চৌধুরী
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে মতিয়া চৌধুরীর জন্ম। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মতিয়া চৌধুরী ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রূষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ১নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মতিয়া চৌধুরী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম
সাবেক প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম (৮১) গত ১৬ নভেম্বর ভোর পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। ফজলুল করিম ১৯৪৩ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আহমেদ কবীর। তিনি আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের বংশধর। বিচারপতি করিম ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর তিনি হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। দুই বছর পর স্থায়ী হন তিনি। ২০০১ সালের ১৫ মে তিনি আপিল বিভাগে যোগ দেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ (৮৫) গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। শিক্ষা প্রশাসক, কবি, সম্পাদক এবং অনুবাদক হিসেবে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সুফি সাহিত্যে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশে। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অবস্থায় ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধান বের করেন। চার বছর পর তিনি আবার অধ্যাপক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। ১৯৯৮ সালে তিনি ঐচ্ছিক অবসরে যান। মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের আসামের তিন শুকিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার পরিবার চট্টগ্রামে চলে আসে।
কবি হেলাল হাফিজ
‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’—অমর এ পঙ্ক্তির রচয়িতা কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেন হেলাল হাফিজ। কেবল কবিতার পাঠকের নিরিখে নয়, যে ব্যক্তি অতটাও সাহিত্যের খোঁজখবর করেন না, এমন অনেকের হৃদয়েও দোলা দিয়েছে হেলাল হাফিজের পঙ্ক্তি। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত প্রতিটি কবিতার শেষে উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে। লড়াইয়ে, সংগ্রামে, প্রেমে-বিরহে, দ্রোহে যাপিত জীবনের পরতে পরতে হেলাল হাফিজ স্পর্শ দিয়ে যান। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় কবির তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’। এত কম কবিতা লিখে এত খ্যাতি পাওয়ার নজির বাংলাদেশের সাহিত্যে আর নেই।
এ এফ হাসান আরিফ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিমান ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ গত ২০ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি, এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান আরিফ। তিনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন হাসান আরিফ। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।