ঢাকা, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ শা'বান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
শুল্ক বাড়ানোর প্রতিবাদে সমুদ্র ও স্থলবন্দরে ফল খালাস বন্ধ
Scroll
জানুয়ারিতে সড়কে ঝরেছে ৬০৮ প্রাণ; রোড সেফটির প্রতিবেদন
Scroll
পুরোপুরি কার্যকর ১২ ব্যাংক, বাকিগুলো খুঁড়িয়ে চলছে: অর্থ উপদেষ্টা
Scroll
রাজনৈতিক দলগুলো সাফল্য চাইলেও সরকার সফল হতে পারছে না: মান্না
Scroll
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২
Scroll
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত প্রায় ৬২ হাজার
Scroll
দেনা আদায়ে সরকারকে চাপ বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের, লোডশেডিংয়ের শঙ্কা
Scroll
বিশ্ব ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু
Scroll
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি বিনামূল্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে: খন্দকার মোশাররফ
Scroll
আগামীতে টঙ্গীতে ইজতেমা না করার শর্তে এবছর অনুমতি পেলেন সাদপন্থীরা; মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন
Scroll
ইউএসএআইডির প্রশাসক নিযুক্ত হলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও
Scroll
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প, তবে চীনের ওপর নয়
Scroll
ঝাউদিয়া থানার দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ
Scroll
সুদানে ভয়াবহ সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ৬৫
Scroll
২০৫ ভারতীয়কে দেশে পাঠাল আমেরিকা
Scroll
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করতে গভর্নরকে দুদকের চিঠি

সালতামামি ২০২৪

বছরজুড়েই লাগামহীন নিত্যপন্যের পাগলা ঘোড়া

প্রকাশ: ২০:২৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৩:৪৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

বছরজুড়েই লাগামহীন নিত্যপন্যের পাগলা ঘোড়া

২০২৪ সালে দেশের সাধারণ জনগনের জীবনযাত্রার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যেমন দামের লাগাম টেনে ধরতে পারেনি, চার মাসের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও। কখনও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, কখনও কৃত্রিম সংকট—এভাবেই সিন্ডিকেট বানিয়ে ভোক্তাদের একপ্রকার জিম্মি করে রেখেছিলেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে, আয় ও ব্যয়ের হিসাব মেলাতে বছরব্যাপী হিমশিম খেতে হয়েছে ভোক্তাদের।

পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সুপারশপগুলো পরিবর্তন এনেছে নিজেদের ব্যবসায়িক কৌশলে। মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের ধরে রাখতে বাজারে এনেছে গরুর মাংস, মাছ, মুরগি, সবজিসহ একাধিক পণ্যের কম্বো প্যাকেজ, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে দেশের সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের চিত্রই তুলে ধরে।

শাক-সবজির আকাশচুম্বী দাম

জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশব্যাপী বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে শাক-সবজির দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়। অক্টোবর মাসে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম চলে যায় ১০০ টাকার ওপরে। নভেম্বরের শুরুতে দাম কিছুটা কমলেও, মাসের শেষের দিকে ফের বাড়ছে। শীতকালীন সবজির দামও চলে গেছে নাগালের বাইরে।

আলুর দামে সেদ্ধ সবাই

চলতি বছরের শুরু থেকে আলুর বাজার ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। যদিও বছরের মাঝামাঝি দাম কিছুটা কমে, অক্টোবরের শেষে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে আলুর দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। টিসিবির পর্যালোচনায় দেখা যায়, মৌসুম শুরুর দিকে প্রতি কেজি আলু ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ৫৫-৬০ টাকায় উঠে। তবে অক্টোবর মাসে দাম ৮০ টাকায় পৌঁছে যায়, যদিও এখন কিছুটা কমেছে। আগের বছরগুলোতে মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি আলু ১৮-২০ টাকায় এবং পরে ২২-৩০ টাকায় বিক্রি হতো। 

পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখে জল

সারাবছর ওঠানামার মধ্যে ছিল পেঁয়াজের বাজার। মার্চ মাসের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে দাম বেড়ে যায়, তবে মে মাসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর দাম কিছুটা কমে। জুন-জুলাইতে পেয়াজের কেজি ১২০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ৫ সেপ্টেম্বর জাতীর রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করলেও, কামানোর বদলে মৌসুমের শেষের অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। নভেম্বরের ৬ তারিখে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে এনবিআর। এই সিদ্ধান্তের ফলে নভেম্বরের শেষদিকে দাম কিছুটা কমলেও, তা ১০০ টাকার ওপরে ছিল। তখন খুচরায় দেশি পেঁয়াজ ১১৫-১২০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হতো।

তেলের সংকট

বছরের শুরুতে স্বাভাবিক থাকলেও, শেষের দিকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দেয়। ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের মুল্য আট টাকা বাড়ানো হয়। বোতলজাত তেলের চেয়ে পাম অয়েল অধিক দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ সময়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫-১৮০ টাকায় এবং খোলা পাম অয়েল বিক্রি হতো ১৮০ টাকায়।

বন্যার প্রভাব ডিম ও ব্রয়লারের দামে

বছরজুড়ে বন্যা ও তাপপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মারা যায় কয়েক লাখ মুরগি। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যায় যার প্রভাব পড়ে মুরগি ও ডিমের সরবরাহে। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুরো বছরজুড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০-২১০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। নভেম্বরের শেষ দিকে দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। এই সময় ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৫-১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা এবং লাল লেয়ার ২৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে ডিসেম্বর মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।

গত কয়েক মাসে ডিমের দামও বেশ চড়া ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে এক ডজন ডিম সর্বচ্চ ১৯০ টাকায়বিক্রি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত থেকে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেপ্টেম্বরে আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি, অভিযান, আমদানীকারকদের সঙ্গে আলোচনাসহ নানাবিধ উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমে আসে। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪-১৪৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাধ্যের বাইরে গরুর মাংস

বছরের শুরুতে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৬৫০-৭০০ টাকার মধ্যে। তবে, শবে বরাত উপলক্ষ্যে দাম বেড়ে এক লাফে উঠে যায় ৮০০ টাকায়। এরপর আর মাংসের দাম কমানো যায়নি। ডিসেম্বর মাসেও গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।

চালের দামও বেড়েছে

নির্বাচনের অজুহাতে বছরের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দেন। ফেব্রুয়ারি-মার্চে আরও এক দফা দাম বাড়ে। তবে অন্যান্য বছরের মতো রমজানে দাম না বাড়লেও এবছর সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন মিল-মালিকরা। এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারেও। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে সরু ও মাঝারি চালের দাম ১৩-১৪ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৭ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকারের নানা উদ্যোগ

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের। গত অক্টোবরে চাল আমদানিতে তিন ধরনের শুল্ক কমানো হয়। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমানো হয়। পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয় আগাম কর।

আলু আমদানিতে ২৫% শুল্ক কমিয়ে ১৫% করা হয়, প্রত্যাহার করা হয় ৩% নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক । ডিম, চিনির ওপর দেওয়া হয় শুল্কছাড়। ভোজ্যতেল আমদানিতে বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর (মূসক) কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। নভেম্বরে পেঁয়াজ আমদানির শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি, টিসিবি ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে খোলাবাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করে সরকার। গত অক্টোবরের শেষে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে তেল, ডাল ও চাল বিক্রির উদ্যোগ নেয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। একই সময়ে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ট্রাকে সাশ্রয়ী দামে আলু, ডিম, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি করা হয়। এছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কার্যক্রমের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রির উদ্যোগও চলমান ছিল।
 

আরও পড়ুন