শিরোনাম
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৭:১৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রতি বছরই হাজার হাজার ফুটবল প্রেমিকদের হতাশ করে অবসরে যান প্রিয় খেলোয়াড়রা। ২০২৪ সালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যাদের প্রস্থান ব্যথিত করে ভক্তদের। শূন্যতা তৈরি করে দলে। তেমনি অনেক রথিমহারথি ফুটবল জগৎকে দুহাত ভরে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। কোনো ফুটবলার এ বছর শুধু জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। আবার কিছু ফুটবলার আছেন যারা সকল প্রকার ফুটবল থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছেন এই বছরেই। চলতি বছর ‘গুডবাই’ বলা এমন কিছু তারকাকে নিয়েই আজকের আলোচনা।
ম্যানুয়েল নয়্যার
ম্যানুয়েল নয়্যার, ২০১১ থেকে ২০২০ দশকের জার্মানীর সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসজয়ী নয়্যার গোলকিপার হিসেবে বিশ্বকাপ ও ইউরোতে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলার। গোলপোস্ট আগলেও বিশ্বসেরা হওয়া যায় তার জলন্ত উদাহরন যেন নয়্যার। অবশেষে, এই বছরের শেষদিকে ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় জানালো এই তারকা ফুটবলার।
টনি ক্রুস
বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সেরা জার্মান মিডফিল্ডার বলা হয়ে থাকে টনি ক্রুসকে। গত ইউরোর পর সব ধরনের ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই মিডফিল্ডার। যদিও বিদায়টা আক্ষেপ নিয়ে শেষ হয়। কারণ তার দল জার্মানি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ আট থেকেই বিদায় নেয়। জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলের হয়ে অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন ক্রুস। ছয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও চারটি সুপার কাপের পাশাপাশি জার্মানির হয়ে ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপও জিতেছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই মিডফিল্ডার। জার্মানির জার্সিতে ১১৪ ম্যাচ খেলা ক্রুস গোল করেছেন ১৭টি। জার্মানির হয়ে বয়সভিত্তিক দলে ২৩টি গোল রয়েছে এই তারকার। রিয়ালের হয়ে ৪৬৫ ম্যাচ খেলা ক্রুস ২৮টি গোলের পাশাপাশি ৯৯টি অ্যাসিস্ট করেছেন। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলা ২০৫ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ২৪টি। সহায়তা ৪৯ গোলে। লেভারকুসেনের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ১০ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট রয়েছে ক্রুসের।
রাফায়েল ভারানে
ইনজুরি যেন কাল হয়ে দাড়াঁল ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের, তাই বাধ্য হয়ে মাত্র ৩১ এ এসে অবসরের সিদ্ধান্ত। চলতি মৌসুমেই মাত্র ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে ইতালিয়ান ক্লাব কোমোতে যোগদান করেন তিনি। ২০২২ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। সাবেক এই রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলার ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে বেশকিছু শিরোপা জিতেছে- তালিকায় রয়েছে স্প্যানিশ লা লিগা, সুপার কাপ, এফএ কাপ। ফ্রান্সের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা এই ডিফেন্ডার শিরোপা জিতেছেন ২০১৮ সালে।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা
ইতিহাসের সেরা মিডফিল্ডারদের মধ্যে অন্যতম স্প্যানিশ তারকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। বার্সেলোনার সাবেক এই মিডফিল্ডার জাপানিজ ক্লাব ভিসেল কোবেলের পর গত মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্লাব এমিরেটসে যোগ দিয়েছিলেন। সবার অনুমান ছিল, মেসির সঙ্গে খেলতে ইন্টার মায়ামিতে হয়তো যোগ দিবেন তিনি। তবে সবাইকে ভুল প্রমাণ করে অবসরের ঘোষণা দেন ৪০ বছর বয়সি এই তারকা। বার্সেলোনায় থাকাকালীন ইনিয়েস্তা লিগ শিরোপার পাশাপাশি, ক্লাব বিশ্বকাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ অনেক শিরোপা জিতেছেন। জাতীয় দলের হয়ে ২০১০ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছেন ইনিয়েস্তা। তার গোলেই ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছিল স্পেন।
লিওনার্দো বোনুচি
লিওনার্দো বোনুচি, ইতালির কিংবদন্তি ডিফেন্ডার গত মৌসুম শেষে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৫ সাল থেকে সিনিয়র এই ডিফেন্ডার খেলেছেন জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, এসি মিলানের মতো ক্লাবে। তবে ক্যারিয়ারের শেষ সময়টা তিনি কাটিয়েছেন তুর্কি ক্লাব ফেনারবাচেতে খেলে। ২০১০-২০১৭- জুভেন্টাসে থাকা সময়টা ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত। সেই সময় লিগ শিরোপা, ইতালিয়ান সুপার কাপ সহ বেশকিছু শিরোপা জয় করেছেন বোনুচি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতার আক্ষেপটা ঘুচেছে ইতালির হয়ে ২০২১ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতে।
পেপে
পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে'কে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের একজন ধরা হয়। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই ডিফেন্ডার গত পাঁচ মৌসুম ধরে স্বদেশী ক্লাব পোর্তোতে খেলছিলেন। তবে মৌসুম শেষে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। ২০০৭ থেকে ২০২৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত পর্তুগালকে সার্ভিস দিয়েছেন ৪১ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডার। ক্লাব ফুটবলে অনেক শিরোপা জিতলেও, জাতীয় দলের হয়ে একটি করে নেশন্স লিগ এবং ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন তিনি।
থিয়াগো আলকানতারা
গত মৌসুম শেষে অবসরের ঘোষণা দেন আরেক স্প্যানিশ তারকা থিয়াগোও। মাত্র ৩৩ বছর বয়সি স্পেনের এই মিডফিল্ডার ক্যারিয়ারে শেষ পর্যন্ত ইনজুরির কাছে হার মেনে অবসর গ্রহনের পরিকল্পনা করেন। যদিও বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও লিভারপুলের মতো ক্লাবে খেলা এই তারকা বেশকিছু শিরোপা জিতেছেন। থিয়াগোর শিরোপার তালিকায় রয়েছে—ইংলিশ লিগ কাপ, এফএ কাপ, ডিএফবি পোকাল, জার্মান লিগ শিরোপা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
থমাস মুলার
এ বছর জার্মানীর জার্সিকে বিদায় জানিয়েছেন আরেক জার্মান স্ট্রাইকার থমাস মুলার। ইউরো থেকে বিদায়ের গুঞ্জন উঠার পরই জার্মানি দলকে বিদায় জানালেন ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। জাতীয় দলের জার্সিতে ১৩১ ম্যাচ খেলা মুলারের নামের পাশে রয়েছে ৪৫টি গোল।
আনহেল ডি মারিয়া
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রাণভোমরা বলা হয় আনহেল ডি মারিয়া। ভক্তরা ডাকেন ম্যান ইন ফাইনাল নামে। গত তিন বছরে আর্জেন্টিনা যে চারটি শিরোপা জিতেছে তার সব গুলোতেই খেলেছেন তিনি। তার একমাত্র গোলেই ব্রাজিলকে হারিয়ে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল আলবেসেলেস্তেরা। এর মাধ্যমে কোপায় ২৮ বছরের শিরোপা খরাও ঘোচায় আর্জেন্টিনা।
পরের বছর ফিনালিসিমায়ও গোল করেন এই উইঙ্গার। আর্জেন্টিনা ৩৬ বছরের আরাধ্য বিশ্বকাপ জেতে ২০২২ সালে ফ্রান্সকে হারিয়ে। সেই ম্যাচেও গোল করেছিলেন ডি মারিয়া। সম্প্রতি তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন। তবে বেনফিকার হয়ে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৪৫ বার মাঠে নেমেছেন আনহেল ডি মারিয়া। গোল করেছেন ৩১টি।
লুইস সুয়ারেজ
আন্তর্জাতিক ফুটবলকে অবসর জানিয়েছেন উরুগুয়ের তারকা লুইস সুয়ারেজও। বার্সেলোনার সাবেক এই তারকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। তিনি উরুগুয়ে জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সুয়ারেজের গোল ৬৯টি। ম্যাচ খেলেছেন ১৪৩টি।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা
ইতিহাসের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন ধরা হয় স্প্যানিশ তারকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে। জাতীয় দলের হয়ে ২০১০ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছেন ইনিয়েস্তা। তার গোলেই ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছিল স্পেন। সাবেক বার্সেলোনার এই মিডফিল্ডার জাপানিজ ক্লাব ভিসেল কোবেলের পর গত মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্লাব এমিরেটসে যোগ দিয়েছিলেন। সবাইকে স্তব্ধ করে অবসরের ঘোষণা দেন ৪০ বছর বয়সি এই তারকা। বার্সেলোনায় থাকাকালীন ইনিয়েস্তা লিগ শিরোপার পাশাপাশি, ক্লাব বিশ্বকাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ অনেক শিরোপা জিতেছেন।
ইলকায় গুন্দোয়ান
বর্তমান ফুটবলবিশ্বের অন্যতম আরকে সেরা মিডফিল্ডার জার্মানির ইলকায় গুন্দোয়ান। গত ১৯ আগস্ট তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন। এই জার্মান মিডফিল্ডার জাতীয় দলের জার্সিতে ৮২ ম্যাচ খেলে ১৯টি গোল করেছেন।
অলিভিয়ের জিরুদ
ফ্রান্সের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভিয়ের জিরুদ। জাতীয় দলের হয়ে ৫৭ গোল করেছেন এই তারকা। কাতার বিশ্বকাপে ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। গত জুলাইয়ে ইউরো টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল থেকে হেরে বিদায় নেয় ফ্রান্স। এরপর নিজেও ফ্রান্স ফুটবলকে বিদায় জানান লস অ্যাঞ্জেলসে সদ্য যোগ দেয়া এই তারকা।
জেরদান শাকিরি
জুলাইয়ে শেষ হওয়া ইউরোর পর দেশের জার্সি তুলে রেখেছেন সুইজারল্যান্ডের জেরদান শাকিরি। এতে ১২৫ ম্যাচেই থামে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। জাতীয় দলের জার্সিতে এই তারকার গোল রয়েছে ৩২টি। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে রয়েছে আরও চার গোল।
সুনীল ছেত্রী
ভারতীয় ফুটবলের পোস্টারবয় সুনীল ছেত্রী হলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার ওপরে রয়েছেন ১৩২ গোল করা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ১০৯ গোল করা লিওনেল মেসি ও ইরানের আলী দাই। সুনীল ছেত্রী ভারতের জার্সিতে ১৫১ ম্যাচে গোল করেছেন ৯৪টি। গত জুনে তিনি জাতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেছেন।
এডিনসন কাভানি
উরুগুয়ে ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা এডিনসন কাভানিও জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়েছেন। ক্ষিপ্র গতির এই স্ট্রাইকার যেকোনো দলের রক্ষণে কাঁপন ধরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলেন। তবে ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকেই জাতীয় দলে উপেক্ষিত ছিলেন এই তারকা। সবশেষ কোপা আমেরিকাতেও জায়গা হয়নি উরুগুয়ে দলে। কে জানে হয়তো বুঝে গিয়েছেন জাতীয় দলে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। তাইতো তিনিও বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন উরুগুয়ে দলকে। জাতীয় দলের জার্সিতে কাভানির গোলের সংখ্যা ৫৮টি।
এছাড়া চলতি বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর তালিকায় রয়েছেন স্পেনের ফুটবলার জেসুস নাভাস, ইংলিশ ডিফেন্ডার কিরান ট্রিপিয়ার, একই দলের ডিফেন্ডার হ্যারি মাগুইরে, বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার জন ভার্টোনহেন, সুইস গোলকিপার ইয়ন সমার, সার্বিয়ার অধিনায়ক দুসান তাদিচ, নেদারল্যান্ডসের দালেই ব্লিইন্ড এবং ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচ।