শিরোনাম
ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:৩৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৭:১৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
অভিষেক ম্যাচ কে না রাঙাতে চায়, অভিষেক বছরটাও বিশেষ হয়ে থাকে ক্যারিয়ারে। বিশেষজ্ঞদের কড়া নজরে অনেকেই ক্যারিয়ারের প্রথম বছরটা দুর্দান্ত কাটায়। এমন আলোচিত বছর কম পাওয়া যায়, যেখানে এক বছরে এত দুর্দান্ত ক্রিকেটারদের দেখা পায় বিশ্ব। সরফরাজ খান থেকে হাসান মাহমুদ- অভিষেক বছরে কাঁপিয়েছেন একঝাঁক ক্রিকেটার।
সরফরাজ খান
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দুর্দান্ত সময় কাটালেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারতের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় সরফরাজের, ওই ম্যাচের দুই ইনিংসেই ঝড়ের গতিতে হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অস্তিত্বের জানান দেন। এখন পর্যন্ত ১১ ইনিংসে একটি দেড়শত রানের রেকর্ড ও ৩টি ফিফটিতে রান ৩৭১, গড় মাত্র ৩৭.১০। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও গড় রান কমেছে (৬৫.৬১)। সেই সুবাদে সরফরাজের অবস্থান ডন ব্রাডম্যানের নিচে।
নাহিদ রানা
বিপিএলে নাহিদ রানা মাত্র ২টি ম্যাচ খেলে শিকার করেছিলেন ২ উইকেট। নাহিদের ঝড়ো গতির (নিয়মিত ১৪৫ কিলোমিটার) কারণে বিসিবির নজর পরে নাহিদের উপর। বিপিএল শেষে মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে হয় নাহিদ রানার অভিষেক। ২২ মার্চ সিরিজের প্রথম ম্যাচে নাহিদ নেন ৫ উইকেট। ৬ টেস্টে এখন পর্যন্ত সর্বমোট শিকার করেছেন ১৫ উইকেট। টেস্টের পর গত মাসে ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়েছে এই ২২ বছর বয়সি খেলোয়ারের।
অভিষেক শর্মা
২০২৪ সালে আইপিএলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলে অভিষেক শর্মার জীবনে শুরু হয় নতুন মোড়। এ আসরে অন্তত ৩৫০ রানের রেকর্ড করেছেন। ১৬ ইনিংসে ২০৪.২১ স্ট্রাইক রেটে ৪৮৪ রান করেন হায়দরাবাদের বাঁহাতি ওপেনার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে রোহিত-কোহলিদের বিদায়ের পর জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফর দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি পরেছেন শর্মা। ১২ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ২৫৬ রান করেছেন তিনি, স্ট্রাইকরেট ১৭১.৮১।
ফ্রেসার ম্যাকগার্ক
৩১ বলে ১০০ করে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক ফ্রেসার ম্যাকগার্ক। কারণ, আলোচিত সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলার পর ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান ম্যাকগার্ক। এরপর আইপিএল দিয়ে নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন। দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ৯ ইনিংসে ২৩৪.০৪ স্ট্রাইক রেটে ৩৩০ রান করেন তিনি। যদিও জাতীয় দলে এখনও সাদামাটা তার পারফরম্যান্স; ৫ ওয়ানডেতে ৮৭ ও ৭ টি-টোয়েন্টিতে ১১৩ রান করেছেন তিনি।
কামরান গুলামি
বাবর আজমের কারণে কামরান গুলামের অভিষেক ম্যাচটি বেশ আলোচিত ছিল। একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হচ্ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক। তাকে সরিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দলে সুযোগ পেয়ে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেন গুলাম। ২২৪ বলে ১১৮ রান করেন তিনি। পাকিস্তান ওই ম্যাচটি জিতে ১৫২ রানে। টানা ৬ টেস্ট হারার পর সেটাই পাকিস্তানের প্রথম জয়।
শামার জোসেফ
১৯৯৭ সালে পার্থ টেস্টের পর অস্ট্রেলিয়ায় জিততে ভুলে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২২ বছর বয়সি শামার জোসেফ এর জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরে অভিষেক ইনিংসেই ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যদিও ক্যারিবীয়রা ওই ম্যাচটি হেরে যায়। গাব্বায় সিরিজের শেষ ম্যাচে নায়কোচিত পারফরম্যান্স দেখান জোসেফ। জয়ের জন্য ২১৬ রানের টার্গেট পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ২ উইকেটে ১০০ রানের বৈতরণী পারও হয়ে গিয়েছিল তারা। এরপর শামার জোসেফ ৭ উইকেট নিয়ে একাই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং ধসিয়ে দেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে ৮ রানে।
মায়াঙ্ক যাদব
আইপিএলে মায়াঙ্ক যাদবের বোলিং তাণ্ডব মনে করিয়ে দেয় তার আলোচিত অভিষেক ম্যাচটি। এ লখনৌ সুপার জায়ান্টস পেসার ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে ব্যাটারদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। প্রায় প্রতিটি ডেলিভারিতেই বোলিং স্পিড ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২টিতেই ম্যাচসেরা হয়েছিলেন, রানবন্যার আইপিএলে ওভারপ্রতি রান দিয়েছিলেন মাত্র ৬.৯৯ করে, দিয়েছিলেন আসরের সর্বোচ্চ গতির ডেলিভারিও (ঘণ্টায় ১৫৫.৮ কিলোমিটার)। এরপর অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। ৩ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
স্যাম কনস্টাস
অভিষেক ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্যাম কনস্টাস। ভয়ডরহীন আর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে তিনি মুগ্ধ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। ভারতের বিপক্ষে বক্সিংডে টেস্টে ১৯ বছর ৮৫ দিন বয়সে অভিষেক হয় তার। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬৫ বলে ৬টি চার ও ২ ছক্কায় ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। প্রথম ৬ ওভার শেষে ২১ বল খেলে ৫ রান করেন কনস্টাস। ছিল না কোনো বাউন্ডারি। তবে সপ্তম ওভারে বুমরাহকে বেধড়ক পেটান তিনি। প্রথম বলে স্কুপ শটে বাউন্ডারি হাঁকান। পরের বলটিও স্কুপ শট খেলে ছক্কায় পরিণত করেন। রিভার্স স্কুপে পঞ্চম বলটিও তিনি চারে পরিণত করেন। ওই ওভারে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৪ রান তোলেন কনস্টাস।
হাসান মাহমুদ
বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এখন তিনি। টেস্ট অভিষেকের বছরেই দারুণ এই অর্জন গড়ে তুললেন ২৫ বছর বয়সী পেসার হাসান মাহমুদ। গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যাত্রা শুরুর পর আলজারির উইকেট পর্যন্ত চলতি বছর ১৩ ইনিংসে হাসানের শিকার ২৫টি। ২০০৮ সালে ১৪ ইনিংসে ২৩ উইকেট নিয়ে এতদিন রেকর্ডটি ছিল শাহাদাত হোসেনের। সেই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বছর শুরু করেছিলেন শাহাদাত, যা এখনও টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের সেরা বোলিং। এরপর ৮ ইনিংসে আরও ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন টেস্ট দলের একসময়ের নিয়মিত পেসার। বছরের শেষ ৫ ইনিংসে কোনো সাফল্য পাননি তিনি। তাই তার রেকর্ড উইকেটের সংখ্যাটা আরও বড় হয়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ৬ উইকেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেন হাসান। পরে পাকিস্তান গিয়ে প্রথম তিন ইনিংসে ৩ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি তিনি। তবে সফরের শেষ ইনিংসে তরুণ পেসার পেয়ে যান প্রথম ৫ উইকেটের স্বাদ। পরে ভারত সফরে গিয়ে চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ৫ উইকেট নেন হাসান। বাকি তিন ইনিংস অবশ্য তেমন ভালো কাটেনি তার। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেট নিয়ে শাহাদাতের রেকর্ডে ভাগ বসান তিনি।
কর্বিন বশ
প্রথম দঃ আফ্রিকার ব্যাটার হিসেবে টেস্টে অভিষেকেই চার উইকেট এবং অর্ধশতরানের নজির গড়েছেন কর্বিন বশ। পাকিস্তানের সঙ্গে অভিষেক টেস্টে নিজের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন। আউট করেন পাকিস্তানের অধিনায়ক শান মাসুদকে। এর আগে আইপিএলে রাজস্থান দলে ছিলেন বটে, কিন্তু কখনই এত নাম করতে পারেননি, যেটা তিনি টেস্টে খেলতে নেমেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করে ফেললেন। ৬৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন প্রোটিয়াদের এই অলরাউন্ডার। দীর্ঘদেহি এই ডানহাতি পেসার চাপে ফেলে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটারদের। অভিষেক টেস্টেই তিনি ছাপিয়ে গেলেন জেপি দুমিনি, ল্যানস ক্লুজেনার, শন পোলকের মতো তারকা অলরাউন্ডারদেরও। ৩০ বছর বয়সী এই বোলারকে সুযোগ দেওয়া হয় দলে, কারণ স্পিনার কেশব মহারাজ চোটের জন্য এই ম্যাচ খেলতে পারেননি।