শিরোনাম
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:৫৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ২০:১৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
বিদায়ি ২০২৪ এর সাথে বহু কিংবদন্তি খেলোয়াড়কে হারিয়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। যারা তাদের মেধা, প্রজ্ঞা আর নানা রকম কসরতে ফুটবলকে করেছে সব বয়সী মানুষের কাছে উপভোগ্য। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের প্রস্থান মেনে নেওয়া কষ্টদায়ক হলেও বিধির অমোঘ বিধান খন্ডানোর জো নেই। দেখে নেয়া যাক কয়েকজন বিশ্বনন্দিত ক্রীড়াবিদের নাম, যারা এ বছর পরলোকগমন করেছেন।
স্বাধীন বাংলা ফুটবলারদের মৃত্যু
গত পাঁচ মাসে না ফেরার দেশে চলে গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পাঁচ সদস্য। গত ২৯ জুলাই চলে যান আমিনুল ইসলাম সুরুজ। ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান সাইদুর রহমান প্যাটেল। ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁদের পথ ধরেন বিমল কর। ১৮ নভেম্বর পৃথিবীকে বিদায় জানান অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। ৭ ডিসেম্বর অনন্তলোকে পাড়ি জমিয়েছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আরেক ফুটবলার ফজলে সাদাইন খোকন। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
মারিও জাগালো, ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ
ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ, ১৯৫৮ সালে খেলোয়াড় হিসেবে জেতার পর ১৯৭০ সালে কোচ হিসেবেও ব্রাজিলকে তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতান মারিও জাগালো। এ বছর ৫ জানুয়ারি ৯২ বছর বয়সে মারা যান। এই সাবেক ফরোয়ার্ড ব্রাজিলের হয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলেছেন। গোল করেছেন পাঁচটি। পেলের সতীর্থ জাগালো ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে ছিলেন। ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরও ছিলেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিল ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। ক্লাব ক্যারিয়ারে ফ্লামেঙ্গো ও বোটাফোগোর নামক দুটি দলে খেলেছেন মারিও জাগালো। তবে এই ৩৩ ম্যাচেই জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ। কোচিং ক্যারিয়ারও বর্ণাঢ্য ছিল জাগালোর। ব্রাজিল জাতীয় দলের পাশাপাশি আরও ১১টি ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার। কুয়েত, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত জাতীয় দলের কোচও ছিলেন তিনি।
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্মান ফুটবল কিংবদন্তি
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি মাত্র ৭৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পারি জমান ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। জার্মানির হয়ে খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকায়ই বিশ্বকাপজয়ী ‘কাইজার’খ্যাত জার্মানির এই খেলোয়ার সর্বকালের সেরা ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। জার্মানির হয়ে ১০৬ ম্যাচ খেলা এই কিংবদন্তি ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জেতার আগে ১৯৭২ ইউরোও জিতেছিলেন। সেসবের সুবাদে ১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে জিতেছিলেন ব্যালন ডি'অর। অধিনায়ক হিসেবে জার্মানিকে তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ এনে দেবার ১৬ বছর পর ইতালির মাটিতে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনাল জিতে কোচ হিসেবে এনে দিয়েছিলেন জার্মানদের তৃতীয় বিশ্বকাপ।
কেলভিন কিপটাম, কেনিয়ার ম্যারাথন দৌড়বিদ
২০২৩ এর অক্টোবরে শিকাগোতে দুই ঘণ্টা ৩৫ সেকেন্ড দৌড় শেষ করে কেনিয়ার কেলভিন কিপটাম ম্যারাথনে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। এ বছর ১১ ফেব্রুয়ারি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ২৪ বছর বয়সে মারা যান এই অ্যাথলেট।
ওজে সিম্পসন, মার্কিন অ্যাথলেট
ষাট ও সত্তরের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কিন অ্যাথলেট ওজে সিম্পসন ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল ৭৬ বছর বয়সে মারা যান ওই সাবেক ক্রীড়াবিদ ছিলেন একজন মার্কিন রাগবি খেলোয়াড়। পরে তিনি সিনেমায় অভিনয় করেন।
ডেরেক আন্ডারউড, ইংল্যান্ড স্পিনার
ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে কোন বিতর্ক ছাড়াই সেরা স্পিনার ডেরেক আন্ডারউড মারা গেছেন এ বছরের ১৫ এপ্রিল। ৭৮ বছর বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনার ৮৬ টেস্টে ২৯৭ উইকেট নিয়েছেন। টেস্টে ইংল্যান্ডের স্পিনারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন। ১৯৮২ সালে শেষ টেস্ট খেলা আন্ডারউডের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার কেটেছে কাউন্টি দল কেন্টে। ১৭ বছর বয়সে কেন্টের মূল দলে অভিষেকের পর তিন যুগের (১৯৬৩-১৯৮৭) বেশি সময়ে কাউন্টি দলটির হয়ে ৯০০–এর বেশি ম্যাচ খেলেছেন সতীর্থদের কাছে ‘ডেডলি’তকমা পাওয়া এই স্পিনার। ১৯.০৪ গড়ে কেন্টের হয়ে ২৫২৩ উইকেট নিয়েছেন আন্ডারউড। খেলা ছাড়ার পর মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সভাপতির পদও সামলেছেন আন্ডারউড।
সেন গোরান এরিকসন, সুইডেনের ফুটবল কোচ
চলতি বছরে প্রয়াত হলেন সুইডেনের বিখ্যাত ফুটবল প্রশিক্ষক সেন গোরান এরিকসন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। গত ২৬ অগাস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এরিকসন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড দলের কোচ ছিলেন এরিকসন। তাঁর কোচিংয়ে ২০০২ এবং ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ এবং ২০০৪ সালের ইউরো কাপ খেলে ইংল্যান্ড দল।
দত্তাজিরাও গায়কোয়াড়, ক্রিকেটার
২০২৪ সালেই ৯৫ বছর বয়সে দত্তাজিরাও গায়কোয়াড় প্রয়াত হয়েছেন ১৯৫২ সালে। ভারতের সবথেকে প্রবীন ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। বরোদায় নিজের বাসভবনেই প্রয়াত হন তিনি। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রজন্মের ক্রিকেটার ছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন মোট ১১টা টেস্ট। সব মিলিয়ে করেছিলেন ৩৫০ রানও। গড় ১৮.৪২। শুধু তাই নয়, টেস্টে ভারতের অধিনায়কত্বও করেছেন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত পারফরম্যান্স করছেন। ৯৪৭ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে ১১০টা ম্যাচ খেলেছেন। ১৭২ ইনিংসে ৫৭৮৮ রান করেছেন। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই।
অংশুমান গায়কোয়াড়, ক্রিকেটার
এ বছরের জুলাই মাসে প্রয়াত হলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার অংশুমান গায়কোয়াড়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বেশ কয়েক বছর ধরেই ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ইডেনে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর। ৪০টি টেস্ট খেলে করেছেন ১৯৮৫ রান করেছেন। গড় ৩০.০৭। শতরান করেছেন দু'টি, অর্ধশতরান করেছেন ১০টি। সর্বোচ্চ রান ২০১। মোট ১৫টি এক দিনের ম্যাচও খেলেছেন তিনি। ২০.৬৯ গড়ে ২৬৯ রান করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স করেছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে বরোদার হয়ে মাঠে নামতেন অংশুমান। ২০৬টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে ১২১৩৬ রান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৪৩টি উইকেটও নিয়েছেন তিনি।