ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

৩০ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ রমজান ১৪৪৬

জুলহাসের অসাধারণ সাফল্য: দেশের গৌরবের নতুন অধ্যায়

আন্তর্জাতিক মঞ্চে জুলহাসের দুর্দান্ত অর্জন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের উড়ান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩:৪৯, ৮ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ২১:১৫, ৮ মার্চ ২০২৫

আন্তর্জাতিক মঞ্চে জুলহাসের দুর্দান্ত অর্জন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল

জুলহাস যেমন উড়লেন, তেমনি উড়লো বাংলাদেশ

ইচ্ছাশক্তি এবং চেষ্টা থাকলে অনেক কঠিন পথও পাড়ি দেওয়া সম্ভব। তেমনি চেষ্টা ও পরিশ্রমে ‘উড়োজাহাজ’ তৈরি করেছেন মানিকগঞ্জের তরুণ জুলহাস মোল্লা। শুধু তৈরিই নয়, নিজেই সেটি সফলভাবে আকাশে উড়িয়েছেন। ২৮ বছর বয়স্ক জুলহাসের বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ষাইটঘর তেওতা গ্রামে। গত মঙ্গলবার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনা নদীর চরে নিজের তৈরি উড়োজাহাজে চড়ে উড়ে বেড়ান। জেলা প্রশাসকসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁর তৈরি বিমান উড্ডয়নের দৃশ্য দেখতে সেখানে হাজির হয়েছিলেন। স্থানীয় হাজারো উৎসুক লোকজনও সেখানে ভিড় করেন।

জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লার গ্রামের বাড়ি ছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়। পরে নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে তাঁরা শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করছেন। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। জিয়নপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তবে অর্থাভাবে আর পড়তে পারেননি। পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান জুলহাস ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। অবসরে তিনি এই উড়োজাহাজ তৈরি করেন।

তিনি জানিয়েছেন, তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে উড়োজাহাজটি তৈরি করতে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা দিয়ে বিমানটির অবকাঠামো তৈরি। পানির পাম্পের ‘সেভেন হর্স পাওয়ারের’ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন তিনি।

 

এমন তো নয় যে জুলহাস মোল্লা নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছেন, এরপরও সারাদেশে এটা নিয়ে আলোচনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জুলহাসকে উৎসাহ জানাতে এগিয়ে এসেছেন। তারেক রহমান পুরস্কৃত করেছেন। এর কি কারণ? এর প্রধানতম কারণ বিশ্ব বিজ্ঞানসভায় আবিষ্কারের দিক দিয়ে আমাদের অবদান উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই। 

১২২ বছর আগে বিশ্বে প্রথম বিমান উড়েছিল। সেটি আমেরিকায়। একেবারেই আনকোরা আবিষ্কার। সে সময় কোনো বই বা ইউটিউব থেকে সাহায্য নেওয়ার সুযোগ ছিল না। এরপরও ওই ১২২ বছর আগের ঘটনা আমাদের দেশজ কোনো বিজ্ঞানী এত দিন চেষ্টা করে দেখেননি। এমনকি দেশে যে এভিয়েশন সায়েন্স পড়ানো হয়, সেখানকার কোনো শিক্ষার্থী বা বিজ্ঞানীও যমুনার চরে গিয়ে নিজেদের বানানো বিমান উড়াতে পারেননি। এমন বাস্তবতায় অবশ্যই ব্যতিক্রম জুলহাস মোল্লা। যাঁর বিদ্যার দৌড় মাত্র মাধ্যমিক পাস। সেই তিনি ‘Aeronautical Engineering’ ব্যাপারটি ধরতে পেরেছেন-এটা বিরাট কিছু।

বিশ্বের প্রথম সফল মোটরচালিত ও নিয়ন্ত্রিত বিমান ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলাইনার কিটি হক শহরে উড়েছিল। এটি আবিষ্কার করেন রাইট ব্রাদার্স-অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট।

তাদের তৈরি বিমান ‘ফ্লায়ার ১’ (Wright Flyer) প্রথমবার আকাশে উড়ে ১২ সেকেন্ডে ৩৭ মিটার (১২০ ফুট) দূরত্ব অতিক্রম করেছিল। সেই ঐতিহাসিক দিনেই আরও কয়েকটি সফল উড্ডয়ন হয়, যার মধ্যে দীর্ঘতমটি ছিল ৫৯ সেকেন্ডে ২৬০ মিটার (৮৫২ ফুট)। রাইট ব্রাদার্সের এই উদ্ভাবনই আধুনিক বিমানের ভিত্তি স্থাপন করে এবং তাঁদের কৃতিত্বের জন্য তারা ‘এভিয়েশনের জনক’ হিসেবে স্বীকৃত।

স্বল্প ক্ষমতার ইঞ্জিনে বিমান চালনো সম্ভব নয়

সাধারণত বিমান উড্ডয়নের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন প্রয়োজন হয়। মাত্র ৭ HP ইঞ্জিন দিয়ে বিমান ওড়ানো অসম্ভবের কাছাকাছি। কারণ এটি সাধারণত ছোট নৌকা, বাইক বা কৃষি যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। তাই এত কম শক্তির ইঞ্জিনে উড্ডয়ন করা হলে সেটি হয়তো প্রকৌশলগত বিস্ময় বলেই গণ্য হবে।

দারুণ অ্যারোডাইনামিক নকশা

বিমানটি সত্যিই উড়তে পেরেছে, তাহলে এটি প্রমাণ করে যে জুলহাসের নকশা অত্যন্ত দক্ষ, হালকা ওজনের এবং বায়ুগতির দিক থেকে নিখুঁত, যা সামান্য শক্তিতে বেশি লিফট তৈরি করতে পারে।

দেশীয় উদ্ভাবনের নজির

বাংলাদেশে ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি বিমান সাধারণত শখের পর্যায়ে থাকে এবং সেগুলো সফলভাবে উড্ডয়ন করতে পারে না। যেহেতু জুলহাস এটি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন, তাহলে এটি প্রযুক্তিগত কৃতিত্বের দৃষ্টান্ত হবে।

বৈশ্বিক উদাহরণ কম

বিশ্বে খুব কমসংখ্যক উদাহরণ পাওয়া যায় যেখানে এত কম ক্ষমতার ইঞ্জিনে কার্যকর বিমান চালানো সম্ভব হয়েছে। সাধারণত ছোট আলট্রালাইট এয়ারক্রাফটেও ২০-৫০ HP ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। তবে সত্যিকারভাবে এটি কার্যকর হয়েছে কি না বা এটি কীভাবে সম্ভব হয়েছে-সেটি গবেষণা কেন্দ্রে যাচাই করা দরকার।

বাংলাদেশের আকাশে যেন নতুন সূর্যোদয় ঘটল! জুলহাসের অবিশ্বাস্য সাফল্য আজ শুধু তার ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং পুরো দেশের জন্য এক অনন্য গর্বের মুহূর্ত। তার এই অর্জন বাংলাদেশের নাম বিশ্বদরবারে আরও উজ্জ্বল করেছে। তরুণ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবাই এখন উচ্ছ্বসিত এই ঐতিহাসিক মাইলফলক নিয়ে।

আরও পড়ুন