ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

সকালে পদত্যাগের খবর

দুপুরে কুয়েটের সহ-উপাচার্যের দাবি, তিনি পদত্যাগ করেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪:১২, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৭:২১, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

দুপুরে কুয়েটের সহ-উপাচার্যের দাবি, তিনি পদত্যাগ করেননি

পদত্যাগ করেননি; বরং অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা এবং অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সহ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কুয়েটের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর শেখ শরীফুল আলম এ কথা জানিয়েছেন। তবে বিষয়ে জানতে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

শেখ শরীফুল আলম আজ বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবরে দেখছি যে কুয়েটের ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এ–সংক্রান্ত কোনো মেইল এখনো আমি পাইনি। আর আমি পদত্যাগ করিনি বা পদত্যাগের জন্য কোনো চিঠি পাঠাইনি।’

শেখ শরীফুল আলম আরও বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টার মুঠোফোন নম্বর আমার কাছে ছিল না। তাই আমি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে লেখা একটা চিঠি পাঠিয়েছি ইউজিসির একজন সদস্যের কাছে। সেখানে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছি বা অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’

শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লেখা ওই চিঠিতে শেখ শরীফুল আলম বলেছেন, ‘গত বছরের ৪ ডিসেম্বর তিনি সহউপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে যোগদানের পর থেকে উপাচার্য তাঁকে কোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে সহযোগিতা করেননি। উপরন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক সহউপাচার্যের সীমিত আকারে প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজ করার যে নীতিমালা ছিল, তা গত ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে গত চার মাসে প্রশাসনিক কাজ এবং আর্থিক বিলে স্বাক্ষর করতে না দিয়ে তাঁকে বঞ্চিত করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য পদটি একটি অলংকারিক পদে পরিণত করা হয়।’

শেখ শরীফুল আলম ওই চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘আমি নিজে এখনো আমার অপরাধ সম্পর্কে জানি না এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি, যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া এবং কোনো অপরাধ বা অপকর্ম না করে অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুল বার্তা যাবে বলে মনে করি।’

এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ দেয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
 
১৪ এপ্রিল রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসব ঘটনায় কুয়েটের উপাচার্যকে অপসারণের এক দফা দাবিতে ২২ এপ্রিল বিকেল থেকে আমরণ অনশনে বসেন ২৯ শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ভিসির পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। অবশেষে দাবি পূরণ হওয়ায় ৫৮ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন