শিরোনাম
বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ১০:০১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
পরিবারের বড় সন্তান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী রুনা খান। নিজের চড়াই উতরাই আর হাসি কান্নার গল্প নানা সময়ে ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন এই অভিনেত্রী। এবার পরিবারের এমনই এক গল্প জানালেন, যা এই সমাজে বিরল। যে গল্প চোখ খুলে দিতে পারে সমাজের আরও দশ পরিবারের। সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন রুনা খানের ভাই। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের ভাগ পুত্র সন্তানের অর্ধেক। তবে সে পথে না হেঁটে বাবার সম্পত্তি দুই ভাই বোনের মধ্যে সমান ভাগ করলেন। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ভাগ করে নিয়েছেন রুনা খান।
১১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রুনা খান তার ভাইয়ের সঙ্গে তোলা কিছু ছবি শেয়ার করেছেন। নিজের ছোট ভাই তুহিনের উদারতার উদাহরণ টেনে, দিয়েছেন লম্বা পোস্ট।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘তুহিন খান, বয়সে আমার দেড় বছরের ছোট, কিন্তু পড়াশুনায় ৫ বছর পেছনে…। আম্মা-আব্বু আমাকে ৫ বছর বয়সে প্রাইমারী স্কুলে সরাসরি ক্লাস টু তে ভর্তি করেন। আর তাকে ৫ বছরে প্লে-গ্রুপে. কিন্ডার-গার্ডেনে, ক্লাস টু উঠতে উঠতে তার বয়স ১০ বছর। আব্বু ১৯৯৮ সালে বিএডিসি থেকে গোল্ডেন-হ্যান্ডশেকে রিটায়ার করেন। আমি এসএসসি পাশ করেছি মাত্র,তুহিন ক্লাস সেভেনে পড়ে। সরকারি সৎ চাকুরীজীবীর ছোট্ট মহাসুখী পরিবার,অঢেল প্রাচুর্য নেই তবে আর্থিক সংকট কি জিনিষ তাও জীবনে কখনো দেখিনি। আব্বুর বেতনের টাকায় মহাসুখে খেয়ে-দেয়ে দুই ঈদে নতুন জামা-জুতো পরে কেটেছে আমাদের দুই ভাইবোনের জীবন। আমি এইচএসসি পাশ করার পর জানতে পারলাম আব্বুর রিটায়ারমেন্টের সব টাকা শেষ। আব্বুর চোখে রেটিনা সমস্যা, তিনি দেখতে পান না ঠিক মতো। কোনও কাজ বা রোজগার তিনি আর করতে পারবেন না!’
এরপর রুনা লিখেছেন, ‘সম্পদ বলতে সখিপুরে বাবার চাকরির টাকায় কেনা ২৫ কাঠা জায়গার উপর বিশাল এক বাড়ী। শাক-সবজী,ফলমুল,মুরগী-ডিম-গরুরদুধ-বাড়ী ভাড়া কিছুই লাগে না, সব নিজেদের। কিন্তু মাসিক কোন রোজগার নেই। ততদিনে আমি ইডেনে অনার্স ভর্তি হয়ে গেছি,তুহিন ক্লাস নাইনে। পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। টিউশনি-কোচিং এ পড়ানো,কুরিয়ার-সার্ভিস অফিসে চাকরি.. এসব করে ঢাকায় নিজে চলি,বাড়ীতে টাকা পাঠাই। সেই টাকায় ভাইয়ের লেখাপড়া, ইলেকট্রিসিটি বিল, অন্যান্য খরচ চলে। তারপর শুরু হলো টিউশনির পাশাপাশি,অভিনয় করে উপার্জন। এভাবেই চলছিলো সংসার। ভাইয়ের পড়াশুনা শেষ হলো। তারপর,২০০৯ এ আমার বিয়ে, ভাইয়ের চাকরি ও বিয়ে। ২০০১-২০০৯ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি থেকে ২০০৯-২০২৫ এমন জীবন-যাপন করছে রুনা, যেখানে তার ১ টাকা সংসারের পেছনে খরচ করতে হয় না। না নিজের সংসার, না মা-ভাইয়ের সংসার। দায়িত্ব ফুরালো রুনাবিবির!’
তিনি লিখেছেন, “রয়ে গিয়েছিলো সখিপুরের ২৫ কাঠার বাড়িটা। ভাই বিক্রি করলো। ধরুন ১০ টাকা! ভাগ করলো টাকাটা। তার ৫ টাকা রেখে আমার ৫ টাকা ব্যাংকে দিয়ে গেলো। সবাই তাকে বুঝায় তুমি সাড়ে সাত টাকা পেলে তোমার বোন পাবে আড়াই টাকা..এটাই দেশের নিয়ম..! তুমি তাকে ৫ টাকা কেনো দিচ্ছো! সে বলে, ‘আমি দেশের নিয়ম মানি না।‘ অন্যরা তাকে বললো, ‘তোমার রোজগার ১ টাকা হলে, তোমার বোনের রোজগার ১০ টাকা। তোমার ১ টাকার সম্পত্তি থাকলে, তোমার বোনের আছে ১০ টাকার সম্পত্তি..! কেনো তাকে বাবার জমির ভাগ অর্ধেক দিবা! আমার ভাই বলে, ‘রুনার আমার থেকে ১০ গুন বেশি আছে তাই অর্ধেক দিলাম, নইলে ওকে পুরাটা দিতাম। বাপের ২৫ কাঠা জমি যে ২৫ বছর আগেই বেচে খেতে হয়নি, তার কারণ রুনা। আব্বুর রিটায়ার্ড করার পর কোন একটা আত্মীয়-স্বজন ১ টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি, রুনা জীবনে ১ টা টাকা কারোর কাছে সাহায্য চায়নি, ধার করেনি। ১৮ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজে চলেছে-সংসার চালিয়েছে-আমাকে মানুষ করেছে। এইজন্যই তো এই জমি আছে,নইলে তো জমি কবেই বেচে খেতে হতো। আব্বুর জমির পুরাটা ওর ভাগ। ওর অনেক আছে তাই ওর ভাগ থেকে অর্ধেক আমি নিলাম।”
একদম শেষে এই অভিনেত্রী ও মডেল লিখেছেন, আমি যা করেছি তা এই দেশের বহু মেয়ে হয়তো পরিবারের-ভাইয়ের জন্য করে। তবে আমার ভাই যা করলো গত সপ্তাহে, তা এই দেশের কয়জন ভাই বাপের সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে বোনদের সাথে করে, তা ঠিক জানিনা। আমার থেকে শেখার তেমন কিছু না থাকলেও, আমার ভাইয়ের থেকে এদেশের ছেলেরা শিখতে পারেন। মনে মনে হাসি আর ভাবি,অর্থ-বিত্ত-বিখ্যাত না হলেও ভাই আমার মানুষ হয়েছে, সত্যিকারের মানুষ।’