শিরোনাম
বাণিজ্য ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:০৫, ১০ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ১৫:১৯, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত ও মানবদরদি শিল্পপতিদের একজন রতন নাভাল টাটা বা রতন এন টাটা। গতকাল বুধবার তিনি ৮৬ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত কয়েক দিন ধরেই তাঁরা চিকিৎসা চলছিল। জানা গিয়েছিল, হেলথ চেকআপের জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন রতন টাটা। হঠাৎ রক্তচাপ নেমে যাওয়ায় কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শেষে বুধবার রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
লোহা থেকে গাড়ি, লবন থেকে ওষুধ। মহীরুহের মতো প্রায় সর্বত্রই ডালপালা মেলেছিল টাটা। স্বাধীনতা উত্তর ভারতে প্রণম্য মানুষ ছিলেন জামসেদ জি টাটা। তাঁর সেই জনহিত. ন্যায়ের ঐতিহ্য, বংশ পরম্পরায় বহন করেছেন রতন টাটাও। তাই তাঁর ছত্রছায়ায় থাকা টাটা অ্যান্ড সনসের ডালপালা যতই ছড়িয়ে পড়ুক না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের আঙুল ওঠেনি। জালিয়াতির অভিযোগ নেই এমন শিল্পপতি আজকাল যেখানে পাওয়াই দুস্কর, রতন টাটা সেখানে বিরল। শিল্পমহলে তিনি ‘ট্রু জেন্টলম্যান’ বা ‘সত্যিকারের ভদ্রলোক’।
১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে পার্সি পরিবারে জন্ম। ১০ বছর বয়সে মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। নিজের এক ভাই রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎভাইও আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাসের পর সত্তরের দশকে টাটা গ্রুপে ম্যানেজারের দায়িত্ব পান রতন টাটা। ১৯৯১ সালে টাটা অ্যান্ড সন্সের দায়িত্ব ছাড়েন জেআরডি। রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাঁকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আপত্তি ছিল কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে যায়। ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল। আয় ও লাভ দুই-ই ৪০ থেকে ৫০ গুণ বৃদ্ধি পায়।
১০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের টাটা গ্রুপের ইস্পাত থেকে সফটওয়্যার পর্যন্ত নানা ব্যবসা রয়েছে। একশ বছরের বেশি সময় আগে তাঁর প্রপিতামহ এই শিল্পগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত রতন টাটা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। রতন টাটা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৯৬ সালে টাটা টেলিসার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৪ সালে আইটি সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসকে জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলেন। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রিটায়ার্ডের পর তাকে টাটা সন্স, টাটা ইন্ডাস্ট্রিজ, টাটা মোটরস, টাটা স্টিল এবং টাটা কেমিক্যালসের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
৭৫ বছর বয়সে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। মাঝে আবার অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা। বয়স যত বেড়েছে ততই দানধ্যানে যুক্ত হয়েছেন তিনি। ২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে ‘পদ্মবিভূষণ সম্মান’। এছাড়া দেশ-বিদেশের অজস্র সম্মান এসেছে তাঁর ঝুলিতে। বিশ্বের সফলতম শিল্পপতিদের তালিকায় ভারতের আম্বানি-আদানিদের নাম বার বার উঠে এসেছে। তার পরেও তাঁদের বিরুদ্ধে আছে নানা অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ। সেই কাদার ছিঁটেও স্পর্শ করতে পারেনি রতন টাটাকে। তিনি শিল্পমহলে প্রকৃত ভদ্রলোক হয়ে থেকে গিয়েছেন আজীবন।