শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:৩১, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৬:৫৭, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
তিন কর্মসূচি পরিচালনা করতে বিশ্বব্যাংক থেকে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ১৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরস বাংলাদেশের জন্য এ ঋণ অনুমোদন দেয়। তিন কর্মসূচি হলো-স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি; পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবাগুলো উন্নত করা; সবুজ এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা। ঋণের এ অর্থ দিয়ে কর্মসূচি তিনটি পরিচালনা করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। সবচেয়ে বড় দূষণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রতিটি সেক্টরে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করা এবং দূষণের দুর্যোগ মোকাবিলা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। এই নতুন অর্থায়ন বাংলাদেশের জনগণের জন্য স্বাস্থ্য, পানি এবং স্যানিটেশনের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো উন্নত করবে। এর মাধ্যমে পরিষ্কার, জলবায়ু সহনশীল এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করবে।
পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশের সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করা হবে। এই অর্থায়ন দেশের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা, অর্থায়ন এবং বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করবে। এছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ, কার্বন মার্কেট সম্প্রসারণ এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নেও সহায়তা করবে। প্ল্যানিং কমিশন ইতোমধ্যে বহুবছরব্যাপী পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম গাইডলাইন গ্রহণ করেছে যা মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর সঙ্গে একীভূত। পাশাপাশি, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর কার্যকর বাস্তবায়নে ডেল্টা অ্যাপ্রেইজাল ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার: সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেবা উন্নয়নে ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৫.১ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫১ লক্ষাধিক মানুষের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। এই প্রকল্প মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর হার হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। বিশেষত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা নারীদের সেবা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের স্ক্রিনিং ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হবে। গ্লোবাল ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (জিএফএফ) থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানও যুক্ত হবে, যা শিশু পুষ্টি, কিশোর স্বাস্থ্য, এবং গুণগত মাতৃ ও নবজাতক সেবা উন্নয়নে কাজে লাগবে।
চট্টগ্রামে নিরাপদ পানির জন্য ২৮০ মিলিয়ন ডলার: চট্টগ্রামে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও উন্নত স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করতে ২৮০ ডলার মিলিয়ন অর্থায়ন করা হবে। এর আওতায় ১০ লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ নতুন ও উন্নত পাইপলাইন সংযোগ পাবে এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করা হবে। চট্টগ্রাম ওয়াসার অপারেশনাল দক্ষতা বাড়ানো, পানির অপচয় কমানো এবং টেকসই আর্থিক কাঠামো তৈরি করাও এই প্রকল্পের অংশ। নতুন পানির মিটার স্থাপন এবং স্মার্ট ডিস্ট্রিক্ট মিটারড এরিয়া চালু করে পানির অপচয় নিয়ন্ত্রণ ও রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা: স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ৪৫ বিলিয়নের বেশি ডলার অনুদান ও সহজ ঋণ প্রদান করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের শর্তমুক্ত ঋণের অন্যতম বৃহত্তম গ্রহীতা। এই অর্থায়ন বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করবে এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।