শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ২০:১৬, ১১ অক্টোবর ২০২৪
২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার ৩৭৫ কোটি পিস ডিমের উৎপাদন হয়েছে বলে জানাচ্ছে সরকারের একটি সংস্থা। আবার এক পিস ডিম উৎপাদনে খরচ দেখানো হচ্ছে প্রায় ১১ টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ। আবার সরকারের আরেকটি সংস্থার তথ্য মতে, দৈনিক উৎপাদনের তথ্যগুলো দৈনিক ভোগের তুলনায় বেশি দেখানো হচ্ছে।
ডিমের উৎপাদন ও খরচের তথ্য অতিরঞ্জিত ও অতিমূল্যায়িত। এমন বাস্তবতায় আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস ২০২৪। এবারের দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি ডিমে আছে রোগমুক্তি’। এবারের প্রতিপাদ্যে ‘ডিমে পুষ্টিকে’ সামনে আনা হলেও দেশের মানুষ উচ্চমূল্যের কারণে ডিম খেতে পারছে না। বর্তমানে ফার্মের মুরগির প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে, যা হালি হিসেবে ৬০ টাকা। ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে ভিয়েনায় প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালন শুরু হয়। সেখানে ডিমের শক্তি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে ডিমভক্তরা দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে।
ডিমের উৎপাদন
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ১১ বিলিয়ন; যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ২০২২ সালের হিসাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে চীন ৫৮৩ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন। তার পরের স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ১৩২ দশমিক ৪ বিলিয়ন। বাংলাদেশ ২৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন।
উৎপাদন-ভোগে ব্যাপক ফারাক
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত বছর দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন ১২.৭ গ্রাম করে ডিম ভোগ করেছে। ফলে দৈনিক ডিমের ভোগ দুই হাজার টনের কাছাকাছি। অন্যদিকে বছরে ডিমের উৎপাদন দেখানো হচ্ছে দুই হাজার ৩৭৫ কোটি পিস। ফলে দৈনিক ডিমের উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ছয় কোটি পিসের বেশি। প্রতিটি ডিমের ওজন ৬০ গ্রামের নিচে ধরা হলে দৈনিক ডিমের উৎপাদন ছাড়ায় তিন হাজার টনের বেশি। ফলে উৎপাদনের সঙ্গে ভোগের তথ্যের ব্যাপক ফারাক রয়েছে।
ভারত থেকে আমদানী
সম্প্রতি ভারত থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে প্রতি পিস ডিম উৎপাদন খরচ পাঁচ-ছয় টাকার কাছাকাছি। সেই ডিম বাংলাদেশে এনে ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে খরচ হচ্ছে সাত-আট টাকা। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার সংবাদমাধ্যমে বলেন,‘বর্তমানে দেশে লেয়ারের, অর্থাৎ ডিমের খামার রয়েছে ১৩ হাজার। আর গত দুই বছরে ছয় হাজারের মত খামার বন্ধ হয়েছে। আর আমদানি করার মানে হল ক্ষুদ্র খামার যা আছে, তাও বন্ধ করে দেওয়া। সরকার এটা করছে আমদানিকারক কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেওয়ার জন্য।” ডিমের দুটি চালান নিয়ে আসা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার ‘হাইড্রো ল্যান্ড সল্যুশন’ যে আমদানি মূল্যের দেখিয়েছে, তাতে কর পরিশোধের পরেও দাম পড়েছে সাড়ে সাত টাকা। কিন্তু এই দরে দুটো চালানে ৪ লাখ ৬২ হাজার ডিমের প্রভাব দেশের বাজারে নগণ্য, উল্টো দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সরকার এবার চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ আমদানির প্রভাব সাধারণ ভোক্তারা পাচ্ছে না, ঢাকার দুটি পাইকারি আড়তের বিক্রেতারাও বলছেন সে কথা। দেশে ডিমের দৈনিক চাহিদা কত, এই প্রশ্নে আবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে ৫ কোটির কথা, আর বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে ৪ কোটি। অন্যদিকে ভারত থেকে আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সাড়ে চার কোটি। অর্থাৎ ভারত থেকে আনা ডিমে চলবে এক দিন।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডিমের প্রাপ্যতা
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্যে দেখানো হচ্ছে, পাঁচ দশকের ব্যবধানে ডিমের প্রাপ্যতা বেড়েছে প্রায় ৩৩ গুণ। ১৯৭০ সালে জনপ্রতি ডিমের প্রাপ্যতা ছিল মাত্র চারটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জনপ্রতি ডিমের প্রাপ্যতা উন্নীত হয়েছে প্রায় ১৩৫.০৯টিতে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল এক হাজার ৫৫২ কোটি পিস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা দুই হাজার ৩৭৪ কোটি ৯৭ লাখ পিসে উন্নীত হয়েছে। একজন মানুষের ডিমের ন্যূনতম চাহিদা ১০৪টি। সেখানে চাহিদার তুলনায় জনপ্রতি প্রায় ৩১টি ডিম বেশি উৎপাদিত হচ্ছে।
ডিমের দাম কিভাবে বাড়ে
খামারি, ব্যবসায়ী অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির নানা কারণ উঠে এসেছে। এসব আলোচনায় উঠে এসেছে প্রথমত. খাবার ও বাচ্চার দাম বাড়ার কারণে অসংখ্য খামার বন্ধ রয়েছে, দ্বিতীয়ত. আবহাওয়াজনিত কারণে উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তৃতীয়ত, দেশের একটি বড় অংশে পাহাড়ি ঢলজনিত কারণে বন্যায় খামার ভেসে গেছে, চতুর্থত, বাজারে নানা ধরনের অপকৌশল।
ডিমের ক্ষেত্রে মুরগির বাচ্চার দাম একটি বড় বিষয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যে বাচ্চার দাম ৩০ টাকা ও ৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। সেটি ১০০ বা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে কোনো কোনো করপোরেট কোম্পানি থেকে বাচ্চার সঙ্গে তার খাবারও কিনতে হয়। এতে বাচ্চার দামও বেড়ে যায়। এজন্য করপোরেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসে বিষয়টি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার উদ্যোগ যত দ্রুত সম্ভব নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও সরকারী খামার ও হ্যাচারিতে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এতে প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে বিক্রির হার বাড়াব। ফিডের কাঁচামালে যেসব শুল্ক আছে, সেগুলো আরও কমিয়ে আনতে আহ্বান জানিয়েছে ডিম ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া যেসব ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক আমদানি করতে হয়, সেগুলোর দাম কীভাবে কমানো যায় তা নিয়েও যথাযথভাবে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।