শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:২০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৫:২১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভারতীয় অর্থনীতির হালহকিকত যে বিশেষ সুবিধার নয়, সেটা বোঝা গিয়েছিল অর্থনৈতিক সমীক্ষার রিপোর্টেই। অর্থনৈতিক সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, আগামী বছরের সম্ভাব্য জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ। ভারত সরকার ২০৪৭ সালের মধ্য ‘বিকশিত ভারত’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার যে লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে সেটা অর্জন করতে হলে অন্তত টানা ১০ বছর ৮ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি বৃদ্ধি জরুরি। কিন্তু সমস্যার জায়গা হল, বাজারে চাহিদা কম। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোজগার বাড়েনি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের। ফলে মধ্যবিত্তর ক্রয়ক্ষমতা কমছে। বাজারে চাহিদা ক্রমশ নিম্নমুখী। সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক প্রকাশিত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে মধ্যবিত্তর সঞ্চয়ে হাত পড়ছে। দেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের সঞ্চয় কমছে। ফলে অর্থনীতির দুই চক্র জোগান এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিস্থিতি বদলাতে বাজেটে বড় ঘোষণা করতেই হত অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে।
বর্তমানে আয়করের ক্ষেত্রে ভারতের দু’টি কাঠামো চালু রয়েছে। একটি পুরোনো এবং অপরটি নতুন। গত বছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে নতুন কর কাঠামোর ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ ৫০ হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার রুপি করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা। এই কাঠামো অনুযায়ী, বার্ষিক ৩ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ে দিতে হয় না কোনো কর। বছরে আয়ের পরিমাণ ৩ থেকে ৭ লাখ রুপি হলে কর ধার্য হয় ৫ শতাংশ।
প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি
প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে ৬.২১ লাখ কোটি রুপি করা হয়েছে, যা গত বছরের ৫.৯৪ লাখ কোটি রুপি থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে মূলধনী ব্যয়ের জন্য ১.৭২ লাখ কোটি রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণে ব্যয় হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এই বরাদ্দ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে এটি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিকে আরও গতি দেবে।
পরিকাঠামো উন্নয়ন
বাজেটে পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশে নতুন ১২০টি বিমানবন্দর তৈরির ঘোষণা করা হয়েছে, যা আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে। এ ছাড়া, শহর পুনর্নির্মাণের জন্য ১ লাখ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। রেল খাতে, ৪০ হাজার সাধারণ ট্রেনের কামরাকে হাই স্পিড বন্দে ভারত কামরায় রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং তিনটি বড় রেল করিডর নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে উদ্যোগ
ক্যানসারসহ দুরারোগ্য রোগের জন্য ব্যবহৃত ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া, ৬টি জীবনদায়ী ওষুধে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা করা হয়েছে। লিথিয়াম ব্যাটারিতেও শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা ও গবেষণা
বাজেটে আইআইটির সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া, মেডিকেল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছে, যা চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ বাড়াবে।
রাজস্ব ঘাটতি ও আয়কর
২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ৪.৮ শতাংশ হবে বলে জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সংসদে নতুন আয়কর বিল পেশ করা হবে, যা করদাতাদের জন্য সুরাহা বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিমা খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সীমা বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সুবিধা
বাজেটে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ ১ লাখ রুপি ঘোষণা করা হয়েছে, যা তাদের কর সাশ্রয়ে সহায়ক হবে।
এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার দেশের প্রতিরক্ষা, পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এ ছাড়া, রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ ও আয়কর ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।