শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:১২, ১৪ মার্চ ২০২৫
গত শনিবার মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। গতকালের বিক্ষোভটি ছিল তেমনই একটি কর্মসূচি।
মাহমুদ খলিল একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী। মাহমুদের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক। গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে চায়।
তবে খলিলের আইনজীবী এবং সমর্থকেরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সমালোচনাকে ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছে। বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা খলিলকে ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
গতকাল বিক্ষোভকারী নেতারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে বার্তা দিতে তাঁরা ট্রাম্প টাওয়ারকে বেছে নিয়েছেন। উঁচু ভবনটিতে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন এবং নিউইয়র্কে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাসভবনের অবস্থান।
জিউশ ভয়েস ফর পিস নামে মার্কিন ইহুদিদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ইহুদি হিসেবে আমরা যে এটা গণহারে প্রত্যাখ্যান করছি, তা জানাতে আমরা ট্রাম্প টাওয়ারের দখল নিয়েছি।’
ওই পোস্টে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ফ্যাসিবাদী উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের এবং যারা মার্কিন অর্থায়নে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল সরকারের গণহত্যা বন্ধের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের অপরাধী করার চেষ্টা করলে আমরা চুপ করে থাকব না এবং আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য লড়াই কখনো থামাব না।’
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অভিনেত্রী ডেব্রা উইংগারও ছিলেন। বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেব্রা বলেন, ‘আমি মাহমুদ খলিলের জন্য দাঁড়িয়েছি, যাঁকে অবৈধভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং গোপন স্থানে নেওয়া হয়েছে। এটাকে কি আপনাদের কাছে আমেরিকা বলে মনে হচ্ছে?’
নিউইয়র্ক থেকে আল–জাজিরার প্রতিনিধি ক্রিস্টেন সালুমি বলেন, ‘ট্রাম্প টাওয়ারের লবি ফাঁকা করতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ৯৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা মূলত সাধারণ পর্যটকদের পোশাক পরে নির্বিকারভাবে ভেতরে ঢুকেছিলেন। এর পর তাঁরা তাঁদের জ্যাকেটগুলো খুলে ফেলে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে লাল রঙের টি–শার্ট পরেন। মাহমুদ খলিলের পক্ষে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে তাঁদের মধ্য থেকে ৯৮ জনকে হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে বের করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।’
খলিল বর্তমানে লুইজিয়ানাতে আটক আছেন। মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারপতি সেই সিদ্ধান্তের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে নিউইয়র্কে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন, যেন তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছাকাছি থাকতে পারেন। তাঁর স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে খলিলকে বিতাড়িত করার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন অনড় অবস্থানে আছে।
খলিল গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ফেডারেল তহবিল বাতিল করেন ট্রাম্প। খলিল গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, ‘এটা প্রথম গ্রেপ্তার, আরও অনেক আসতে চলেছে।’
এসব ঘটনার পর, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত থাকা আরও ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ক্যাম্পাসের একটি ছাত্র সংগঠন। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে—বহিষ্কার, ছাত্রত্ব স্থগিত এবং ডিগ্রি বাতিল।
যদিও এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ-এমনটাই বলছেন অনেক বিশ্লেষক।