শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৫৪, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
এদের মধ্যে আছেন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতোম, এফ্রায়িম হালেভি ও তামির পারদো। তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় যুদ্ধ চলতে থাকায় বন্দি ও সেনাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এই কষ্ট থামাতে সরকারকে সাহসী ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ সাবেক মোসাদ সদস্যদের মতে, বন্দিদের মুক্তি পাওয়া জাতীয় নিরাপত্তা ও নৈতিকতার প্রশ্ন।
তারা বলেন, ‘অতিবাহিত হওয়া প্রতিটি দিন বন্দিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিলম্ব হওয়া প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’
চিঠিটি পরিচালনা করেছেন ইসরাইলের সবেক প্রধান বন্দি বিনিময় মধ্যস্থতাকারী ডেভিড মেইদান। তিনি ২০১১ সালে গিলাদ শালিতকে মুক্ত করার চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
এদিকে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করে বন্দিদের ফিরিয়ে আনার আহ্বানে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন ইসরাইলের ২০০ সামরিক চিকিৎসক ও ১০০০ শিক্ষাবিদ।
দেশটির চ্যানেল ১৩ জানিয়েছে, রোববার প্রকাশিত একটি পিটিশনে তারা যুদ্ধ থামানোর দাবি জানান। চিকিৎসকরা বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে রিজার্ভ চিকিৎসক হিসেবে কাজ করি। আমরা দাবি করছি, গাজা যুদ্ধ অবিলম্বে থামাতে হবে এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তাদের মতে, যুদ্ধ এখন আর নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক স্বার্থে চালানো হচ্ছে। পিটিশনে তারা আরও বলেন, ‘৫৫০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ ইসরাইলের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে। আমরা বেদনার সঙ্গে বলছি, এই যুদ্ধ রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে, এর সঙ্গে নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’
তারা বলেন, ‘গাজায় হামলা চলাকালীন প্রায় ৪০ জন বন্দি নিহত হয়েছেন। আমরা চিকিৎসক হিসেবে জীবনের পবিত্রতায় বিশ্বাস করি। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ও বন্দিদের পরিত্যাগ করা আমাদের নৈতিকতার পরিপন্থি’।
সামরিক চিকিৎসকদের এই পিটিশন আরও বড় এক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধিতার ধারাবাহিক অংশ।এই আন্দোলনে শামিল হয়ে সেনা রিজার্ভ সদস্য, বিশেষ বাহিনী ও শিক্ষাবিদরাও একই দাবি জানাচ্ছেন-বন্দিদের মুক্তির জন্য যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। গত কয়েক দিনে অন্তত ৬টি পিটিশন প্রকাশিত হয়েছে।
যারা ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরোধী পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিমানবাহিনীর ১,০০০ রিজার্ভ সদস্য, প্রায় ১,০০০ শিক্ষাবিদ, সাঁজোয়া বাহিনী, নৌবাহিনী, ৮২০০ ইউনিট, প্যারাট্রুপার্স ১৩তম ব্যাটালিয়ন, শালদাগ, সায়েরেট মাতকাল এবং মোরান ইউনিটের সদস্যরা। এর আগে আরও এক দল সামরিক চিকিৎসক একটি পৃথক পিটিশনে স্বাক্ষর করেন।
তাদের এই আহ্বান এমন এক সময়ে সামনে আসছে, যখন ইসরাইলজুড়ে জনমনে ক্ষোভ ক্রমাগত বাড়ছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে গত ৫ এপ্রিল জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়, যেখানে অনেকেই বন্দিদের মুক্তির জন্য নতুন চুক্তির দাবি জানান।
তবে তাদের এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যেসব সক্রিয় সেনা এসব পিটিশনে সই করছেন, তাদের বরখাস্ত করা হতে পারে।
ইসরাইল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবারও হামলা শুরু করে এবং ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি ভেঙে দেয়। এ নিয়ে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চালানো ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনে এ পর্যন্ত মোট ৬২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সেইসঙ্গে অবিরাম বিমান হামলা ও বোমা মেরে পুরো গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতোমধ্যেই নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এছাড়াও ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলাও চলছে। সূত্র: টাইমস অব ইসরাইল ও আনাদোলু