ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

৬ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

স্বায়ত্তশাসন চায় তামিলনাড়ু, মুখ্যমন্ত্রীর কমিটি গঠন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫:৫৯, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৫৯, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

স্বায়ত্তশাসন চায় তামিলনাড়ু, মুখ্যমন্ত্রীর কমিটি গঠন

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন রাজ্যের অধিকার রক্ষায় ও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন।

এই কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ। কমিটিকে রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সদ্যগঠিত ওই কমিটির আরেকটি বড় দায়িত্ব হলো- যেসব বিষয়ে একসময় শুধু রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল কিন্তু পরে সেগুলো ‘সমবর্তী তালিকায়’ স্থানান্তর করা হয়েছে, সেগুলো আবার রাজ্যের একক নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর উপায় খুঁজে বের করা। অর্থাৎ, রাজ্য সরকার যে বিষয়গুলোতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারত, এখন যেগুলো কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেগুলো রাজ্যের হাতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটি।

এই কমিটিতে থাকছেন আরও দুই সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তারা হচ্ছেন- অশোক শেঠি এবং এম ইউ নাগরাজন। তারা ভারতীয় সংবিধানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বা “ইউনিয়ন অব স্টেটস”-এর ঐক্য অক্ষুণ্ণ রেখে বর্তমান আইনগুলোর মূল্যায়ন করবেন।

কমিটিকে ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট ও ২০২৮ সালের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন বিধানসভায় বলেছেন, এই উদ্যোগ কেবল তামিলনাড়ুই নয়, ভারতের সব রাজ্যের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে কমিটি গঠনের এই পদক্ষেপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল ডিএমকে ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে টানাপড়েন চলছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- মেডিকেল ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত বিতর্কিত পরীক্ষা নিট (NEET) থেকে তামিলনাড়ুকে বাদ দেওয়ার দাবি।

সম্প্রতি, রাজ্যপাল আরএন রবি দীর্ঘদিন আটকে রাখা দশটি বিল অনুমোদন না দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট তার এই ভূমিকাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ এবং ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করে। এসব বিলের মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে আনার প্রস্তাবও।

এই রায়কে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন ‘ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানান এবং রাজ্যপালকে রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন।

বর্তমানে শিক্ষা সমবায়ী বা সমবর্তী তালিকায় থাকায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার উভয়ই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন চাইছেন, শিক্ষা যেন পুরোপুরি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য তিনি সংবিধানের ৪২তম সংশোধনী বাতিলের দাবি করেছেন- যেটির মাধ্যমে একসময়ের “রাজ্য তালিকায়” থাকা শিক্ষাকে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল।

এছাড়া নিট পরীক্ষা নিয়ে বিরোধ তীব্রতর হয় যখন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দু’বার পাস হওয়া একটি রাজ্য বিল খারিজ করেন। ওই বিলে নিট পরীক্ষা বাতিল করে বরং দ্বাদশ শ্রেণির নম্বরের ভিত্তিতে মেডিকেলে ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর কথা বলা হয়েছিল।

স্টালিন বলেছিলেন, ‘কেন্দ্র যদি আমাদের অনুরোধ নাকচ করে, তবু আমাদের লড়াই শেষ হয়নি। আমরা আইনি পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করব।’

জাতীয় শিক্ষানীতিতে (এনইপি) তিন ভাষার ফর্মুলাও তামিলনাড়ুর সঙ্গে কেন্দ্রের আরেকটি বড় সংঘাতের কারণ। এতে সপ্তম শ্রেণি থেকে তৃতীয় ভাষা শেখার বাধ্যবাধকতা থাকায় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই রাজ্যে “হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার” আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ক্ষমতা ডিএমকে বলছে, তামিল ও ইংরেজি মিলে তাদের প্রচলিত দুই-ভাষার ফর্মুলাই যথেষ্ট এবং এর বাইরে কিছু চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। তারা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার শিক্ষা তহবিল আটকে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে।

যদিও বিজেপি ও প্রধান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ডিএমকে নিজেরাই আগের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে।ডিএমকে ও বিজেপির দ্বন্দ্ব ক্রমেই রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে আশঙ্কাও, যা উত্তর ভারতের হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলোকে বেশি আসন দিতে পারে এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে দিতে পারে।

তামিলনাড়ুতে ঐতিহাসিকভাবে বিজেপির শক্ত কোনও অবস্থান নেই এবং ২০২৬ সালে রাজ্যটিতে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন এবং রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে স্টালিনের এই পদক্ষেপ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন