ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

ট্রাম্পের যে নীতির কারণে গৌরব হারাতে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১:৫৭, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্পের যে নীতির কারণে গৌরব হারাতে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা স্থগিত করার পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প। তবে শুল্ক আরোপ ও স্থগিতের ঘোষণা ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ডলার, যা একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার ছিল, এখন তার শক্তি হারাতে শুরু করেছে।

গত কয়েক মাস ধরে ডলারের মান ক্রমাগত কমছে। ১৮ এপ্রিল, বিশ্ব বাজারের শেষ কর্মদিবসে, ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান ছিল ৯৯.২৩। অথচ জানুয়ারিতে এই সূচকের মান ছিল ১১০। অর্থাৎ, জানুয়ারি থেকে ডলার ইনডেক্সের মান ৯.৩১ শতাংশ কমেছে। ১১ এপ্রিল, ২০২৩ সালের জুলাই মাসের পর এই প্রথম সূচকটি ১০০-এর নিচে নেমে যায়, যা দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এপ্রিলের শুরু থেকেই ইউরো ও পাউন্ডের বিপরীতে ডলারের মান ৫ শতাংশ এবং ইয়েনের বিপরীতে ৬ শতাংশ কমেছে। ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর ডলারের এই পতন আরও দ্রুত হয়েছে।

বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে ডলারের মান পুরোপুরি বাজার নির্ভর না হওয়ায়, বিশ্ব বাজারের এই পতন এখানে তেমন প্রভাব ফেলেনি। যদিও একসময় টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছিল, এখন তা বাজারের কাছাকাছি। ভারতের রুপির বিপরীতেও ডলারের মান কমেছে, যদিও পূর্বে রুপির মান কম ছিল। অর্থাৎ, ডলারের চাহিদা কমছে এবং বিনিয়োগকারীরা এটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে মার্কিন অর্থনীতির ওপর মানুষের আস্থা কমছে। এর প্রমাণ হিসেবে, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের চাহিদাও কমেছে, যার ফলে সুদহার বাড়াতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলার সোনার মতো সুরক্ষিত বিনিয়োগ মাধ্যম। তাই, ডলারের এই পতন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।

ট্রাম্প আশা করেছিলেন, শুল্ক ঘোষণার পর শেয়ার বাজারের পতন বা ডলারের বিনিময় হার কমে গেলে, বছরের শেষে শুল্কের অর্থ দিয়ে কর হ্রাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু শুল্ক ঘোষণার পর মন্দার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

মার্কিন কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের অর্থনীতিবিদ বেন স্টিলের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শক্তিশালী ডলারের কারণে আমেরিকার ঋণের সুদহার কম থাকে এবং বিশ্ব বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। কিন্তু ডলারের ওপর আস্থা কমে গেলে মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে।

আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট পুরনো হয়ে যাওয়ায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত ডিজিটাল মুদ্রা চালু হলে এর প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। মার্কিন টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ জেফরি স্যাক্স মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের অবসান শুরু হয়েছে। চীন ইতিমধ্যেই ইউয়ানে বাণিজ্যের চেষ্টা করছে এবং ভারতসহ অনেক দেশ ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায়। তাই, ডলারের বিকল্প মুদ্রার উত্থান অসম্ভব নয়।
 

ঢাকা এক্সপ্রেস/ বিডি

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন