ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলা

আদিলের পর ঝন্টু- শহীদ হয়েছেন দুই সাহসী যোদ্ধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:১৪, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

আদিলের পর ঝন্টু- শহীদ হয়েছেন দুই সাহসী যোদ্ধা

জম্মু ও কাশ্মীরের অভিযানে শহীদ হয়েছেন হাবিলদার ঝন্টু আলী শেখ। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬ প্যারা স্পেশাল ফোর্সের একজন সাহসী যোদ্ধা। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার ছেলে, একজন বাঙালি, একজন মুসলমান, এবং সর্বোপরি একজন ভারতীয় সৈনিক। এর আগে জানা যায়, সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ্‌ নামের একজন মুসলিমই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছিল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে, শহীদ হয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন হচ্ছে-এই আত্মত্যাগ কি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের জন্য খুবই ‘অস্বস্তিকর’? ‘তুমি হিন্দু না মুসলমান?’—এই প্রশ্নটা নিয়ে তোলপাড় তুলেছিল ভারতীয় মিডিয়া! ঘণ্টার পর ঘণ্টা টকশো, তর্জন-গর্জন, জাতীয়তাবাদের নামে ধর্মভিত্তিক উত্তেজনা ছড়ানো—সবই ছিল মিডিয়া-উৎসবের অংশ।

কিন্তু ২৪ ঘন্টা পর একজন মুসলমান সেনা যখন নিজের জীবন বিসর্জন দিল, তখন ক্যামেরাগুলো যেন ‘মুসলমান পরিচয়টায়’ ফোকাস হারিয়ে ফেলেছে। একজন মুসলমানের জন্য না কোনো শোক, না কোনো স্টুডিও বিতর্ক, না কোনো ট্রিবিউট-টুইটার খুঁজেও পাওয়া যায়নি ঝন্টুর মুসলমান পরিচয় হাইলাইট করে তেমন কোনো পোস্ট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খুঁজে ঝন্টুকে নিয়ে পাওয়া গেছে অল্প কিছু তথ্য।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ঝুন্টুরা তিন ভাই। গ্রামের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নাদিয়া। ঝন্টু ও তাঁর বড় ভাই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ঝন্টুর বড় ভাই রফিকুল শেখ কাশ্মীরেই অন্যত্র পোস্টেড রয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর সেনাবাহিনী মারফত প্রথম পান তাঁর স্ত্রী। ঝন্টুর মা প্রায় শয্যাশায়ী। বাবার শরীরও অসুস্থ।

ঝন্টুর স্ত্রী, একটি ছেলে ও মেয়ে থাকেন আগ্রায়। ছুটি পেলে নদিয়ায় গ্রামের বাড়ি আসতেন। পর পর তিন বছর কাশ্মীরে পোস্টিং পাওয়ার পর মাঝে অন্যত্র পাঠানো হয়েছিল। কয়েকমাস আগেই ফের কাশ্মীরে পোস্টেড হন। মঙ্গলবারের ঘটনার পর ইন্ডিয়ান আর্মির যে বাহিনী জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে পহেলগাম, রাজৌরি, পুঞ্চ-সহ বিভিন্ন জায়গায়, সেই টিমের সদস্য ছিলেন ঝন্টু।

পহেলগামের বৈসরন ভ্যালিতে বেছে বেছে ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়ে হত্যা করা হয়েছে পর্যটকদের। যা নিয়ে ধর্মীয় ভেদাভেদের আওয়াজ তুলছেন অনেকেই। ঝন্টুর ফুপাতো ভাই নাজিম বলেন, ‘কাশ্মীরে ধর্ম জেনে মারা হয়েছিল, কিন্তু আমার ভাই তো মুসলমান। আমার ভাইকে কেন মারল? কারণ সন্ত্রাসবাদীদের কোনও জাত নেই।’

ঝন্টুর শহিদ হওয়ার বাড়িতে পৌঁছতেই একে একে জড়ো হতে শুরু করেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের গ্রামের ছেলে জঙ্গিদের হাত থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। ঝন্টু তাঁদের কাছে গর্ব, বলছেন সকলেই। ইতিমধ্যেই পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝন্টুর মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন