ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১২ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ঢামেকের বহির্বিভাগে চিকিৎসা বন্ধ
Scroll
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া নামের আগে ডাক্তার পদবি নয়: হাইকোর্ট
Scroll
এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মারা গেছেন
Scroll
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে জিম্মি হওয়া ৮০ জনকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, নিহত হয়েছেন ১৩ জন
Scroll
দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ, একীভূতকরণ কিংবা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়
Scroll
সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন
Scroll
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকি আক্তারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মধ্যরাতে শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ইফতারে চিনির শরবত: উপকার নাকি ক্ষতি?

ইফতারে চিনির শরবত কেন ক্ষতিকর? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত

ইফতারে শরবত পানের উপকারিতা ও বিকল্প

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩:৫০, ৭ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ০০:৪৭, ৮ মার্চ ২০২৫

ইফতারে চিনির শরবত কেন ক্ষতিকর? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত

ইফতারে চিনির শরবত কেনো খাওয়া উচিত নয়

সারা দিন না খেয়ে থাকার পর ইফতারে আমরা অবশ্যই পান করি চিনি মেশানো শরবত। এটা আমাদের ইফতারের জন্য বহু বছরের প্রয়োজনীয় একটি পদ। কিন্তু স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় রাখলে চিনি মেশানো শরবত ইফতারে না রাখাই ভালো। আপনি হয়তো বলবেন, সারা দিন রোজা থাকায় কোনো ক্যালরি গ্রহণ তো হয়ইনি, তাহলে ইফতারে চিনি খেলে ক্ষতি কি? তা ছাড়া চিনি থেকে গ্লুকোজ পাওয়া যায়, এ কথাও তো ঠিক। গ্লুকোজ আমাদের দেহ ও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনও বটে। কিন্তু চিনি থেকে যেভাবে গ্লুকোজ পাওয়া যায়, তা আসলে কারও জন্যই খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।

জেনে নিন এ বিষয়ে গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞরা কী বলে-

শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি

মিষ্টি পানীয়তে থাকা উচ্চ মাত্রার চিনি (সুক্রোজ বা ফ্রুক্টোজ) রক্তে খুব দ্রুত শোষিত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। ইনসুলিনের কাজ হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা এবং কোষে গ্লুকোজ প্রবেশে সাহায্য করা। অতিরিক্ত ইনসুলিনের প্রভাবে আবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমে যায়, যা কখনও কখনও হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া) এর কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য চিনির শরবত আরো বেশি সমস্যা, কেননা ইনসুলিনের মাত্রা শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা থাকেনা তাদের শরীরে। ফলে রক্তে শর্করা একবার অতিরিক্ত বেড়ে যায়, আবার অনেক বেশি নেমে যায়। এতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর চাপ পড়ে।

শারীরিক স্থূলতার ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত মিষ্টি পানীয় পান করলে মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ে। মেটাবলিক সিনড্রোম হলো একগুচ্ছ শারীরিক অবস্থা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা, অতিরিক্ত চর্বি এবং অস্বাভাবিক কোলেস্টেরল, যা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত চিনিযুক্ত পানীয় পান করেন তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২৬% বেশি।

লিভারের চর্বি জমা হওয়া

মিষ্টি পানীয়তে থাকা ফ্রুক্টোজ লিভারে চর্বি জমার একটি প্রধান কারণ। গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভারে মেটাবলাইজড হয় এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। এই অবস্থা লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে।

মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব

চিনিযুক্ত পানীয় মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যা আনন্দের অনুভূতি দেয়। এই প্রক্রিয়াটি চিনিযুক্ত পানীয়ের প্রতি আসক্তি তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ জাতীয় পানীয় মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে।

দাঁতের ক্ষয়ের কারণ

অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় দাঁতের এনামেল ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। গবেষণা অনুসারে, চিনি এবং অম্লীয় উপাদান দাঁতের ক্ষয় এবং ক্যাভিটি তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে মিষ্টি পানীয় পান করার পর দাঁত ব্রাশ করা বা পানি দিয়ে কুলি করা উচিত।

তাহলে তো চিনি মেশানো মিষ্টি শরবতের পরিবর্তে বিকল্প খুঁজতেই হয়, বলুন? সেই বিকল্প কি জিরো ক্যালরি চিনি? নাহ, সেটিও খুব একটা ভালো নয়। কারণ এর অন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, খাবারে চিনির মাত্রা রাখতে হবে পরিমিত। মিষ্টান্ন খেলেও তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। আর শরবত বা অন্য পানীয়তে চিনি না দেওয়াই ভালো। মিষ্টি ফলের রস তো লবণ-চিনি ছাড়াই খাওয়া যায়। পানসে বা টক ফলের রসে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন, যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদ্‌রোগ না থাকে। তবে যেকোনো ফলের রসে বিভিন্ন ধরনের মসলা কিংবা ধনেপাতা, পুদিনাপাতার মতো উপকরণ যোগ করে সুস্বাদু পানীয় তৈরি করা সম্ভব। তাহলে ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে, আপনিও থাকবেন সুস্থ।

ইফতারে ঠান্ডা ও মিষ্টি শরবত পান করতে অনেকেই ভালোবাসেন। বিশেষ করে চিনির শরবত প্রচলিত একটি পানীয়। তবে এটি কি আসলেই স্বাস্থ্যকর? চিকিৎসকদের মতে, ইফতারে চিনির শরবত পান করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই ইফতারে স্বাস্থ্যকর বিকল্প নিয়ে ভাবা জরুরি।

আরও পড়ুন