শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:১৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ৯ আসামিসহ সবাইকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। আসামিপক্ষে আইনজীবী জামিল আক্তার এলাহী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান মামুন শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।
এর আগে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ৩০ জানুয়ারি রায়ের জন্য আজকের ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
ওই মামলায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই রায় দেন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সবাই বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র ২০১৯ সালে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল, নিয়মিত আপিল করতে পারেন হাইকোর্টে। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলায় আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা বিদ্বেষপূর্ণ বিচার। তদন্ত ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ দায়সারা গোছের ও কাল্পনিক। এর বিচারিক আদালত অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা মেটানো ও কাউকে খুশি করার জন্য ওই রায় দেওয়া হয়েছিল। বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত ৪৭ জনের মধ্যে এরই মধ্যে দুজন মারা গেছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জন ছাড়া বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। আদালত আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে ট্রেনে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢোকার সময় ট্রেনবহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার অভিযোগে ঈশ্বরদী জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (স্থগিত কমিটি) জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
মামলা দায়েরের পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আদালত সে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে অধিক তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃ তদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে আবার অভিযোগপত্র জমা দেয়।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তারা হলেন তখনকার জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কে এম আখতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির (স্থগিত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, তার ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, অন্য ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ, বিএনপি নেতা মো. অটল, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি শ্যামল (নূরে মোস্তফা), স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন ও বিএনপির সাবেক নেতা শামসুল আলম।
বিচারিক আদালতের রায়ে ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তারা হলেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান, আক্কেল আলী, মোহাম্মদ রবি, মোহাম্মদ এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মো. মামুন, মামুন-২, সেলিম হোসেন, মো. কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম ওরফে লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম, আলমগীর হোসেন, এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও আবুল কালাম।
১০ বছর করে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বিএনপি নেতা ও ঈশ্বরদী উপজেলার শাহাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান রাজু, আজমল হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. রনো, মো. বরকত, চাঁদ আলী, এনামুল কবির, মো. মোক্তার, হাফিজুর রহমান মুকুল, হুমায়ন কবির ওরফে দুলাল, জামরুল (পলাতক), তুহিন বিন সিদ্দিক ও ফজলুর রহমান।