শিরোনাম
প্রকাশ: ০৯:৩১, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১০:৪৭, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
ভোরের স্নিগ্ধ আলো ফুটতেই রমনার বটমূলে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দবরণের সূচনা হয়। রমনার বটমূলে সাজানো মঞ্চে সারিবেঁধে বসেন দেড় শতাধিক শিল্পী। ঠিক সোয়া ৬টায় শুরু হয় ঐতিহাসিক এই বর্ষবরণের ৫৮তম আয়োজন। প্রায় ১০ মিনিট চলে রাগালাপের অমৃত সুরের খেয়া। অতঃপর শুরু হয় গান পর্ব।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, লালন ও বাংলাদেশের লোকজ ধারার বেশ কিছু গান এই পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। একক ও সমবেত কণ্ঠের পরিবেশনায় থাকা গানগুলো হলো- তোমার চরণ তলে দিও মোরে ঠাঁই, নতুন প্রাণ দাও, তিমির দুয়ার খোলো, আপানারে দিয়ে রচিলি রে, তুমি প্রভাতের সকরুণ রবি, তুমি প্রভাতের সকরুণ ভৈরবী, ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়, সকল কলুষ তামস হর জয় হোক তব জয়, তোর ভেতরে জাগিয়া কে যে, জগতের নাথ করো পার হে, মোরা সত্যের পরে মন আজি করিবো সমর্পণ, আজি নতুন রতনে ভুষণে যতনে, গগনে প্রলয় মেঘের মেলা, আমার মুক্তির আলোয় আলোয়, আকাশে দুই হাতে প্রেম বিলায় ও কে, মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান, ভাইয়ের দোরে ভাই কেঁদে যায়, মৃত্যু নাই নাই দুঃখ আছে শুধু প্রাণ, এই বাংলা রবি ঠাকুরের বাংলা কবি নজরুলের, এ বিশ্বমাঝে যেখানে যা সাজে, মন সহজে কি সই হবা, ও আলোর পথযাত্রী, নাচো আর গান গাও তালে তালে ঢোল বাজাও তাকধিনাধিন।
এর ফাঁকে আবৃত্তিশিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি করেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অনুষ্ঠানের শেষ হয় জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ দিয়ে।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে রমনার বটমূল ও এর আশপাশের এলাকায় কঠোর নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এদিন ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে প্রভাতে কণ্ঠ ও যন্ত্রশিল্পী মিলে প্রায় দেড়শ জনের সুরবাণীতে নতুন বছরকে আবাহন জানানো শুরু হয়। সকাল ৭টা নাগাদ ঢল নামে সাধারণ মানুষের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতি ভেদাভেদ ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রঙিন পোশাকে রমনার বটমূলে এসেছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষেরা। ফলে বৈশাখের এ আয়োজন রূপ নিয়েছে বর্ণাঢ্য মহোৎসবে। এ উৎসব ঘিরে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে বটমূল চত্বর। পার্কের ভেতরে বিভিন্ন স্থানজুড়ে রয়েছে লোকসমাগম।
এবারের আয়োজনে বটমূলে মোট ২৪টি পরিবেশনা হবে। এর মধ্যে ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক কণ্ঠের গান ও ৩টি পাঠ থাকছে। নববর্ষের কথন পাঠ করবেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। আয়োজন শেষ হবে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে।
এবার রমনার বটমূলে পূর্ব-পশ্চিমে অর্ধবৃত্তাকারে ৭২ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চে মোট পাঁচটি ধাপ রয়েছে। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে কণ্ঠ ও যন্ত্রশিল্পী মিলে প্রায় দেড়শ জনের সুরবাণীতে নতুন বছরকে আবাহন জানানো হয়।
দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংস্থা ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এবছরও বটমূলে ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করা হচ্ছে সুর আর সঙ্গীতের মূর্ছনায়।