ঢাকা, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম

Scroll
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলা, নিহত ২৭
Scroll
শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জেরে ঢাকা ও সিটি কলেজ দুই দিন বন্ধ ঘোষণা
Scroll
পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
Scroll
ভ্যাটিকানের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য
Scroll
সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি
Scroll
সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পুড়ে গেছে তথ্যটি সঠিক নয়: অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরসাদুর রউফ
Scroll
সাগর-রুনি হত্যা মামলা: তদন্তের জন্য আরও ৬ মাস সময় পেল টাস্কফোর্স
Scroll
পারভেজ হত্যার ঘটনায় দুই ছাত্রী সাময়িক বহিষ্কার
Scroll
ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
Scroll
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি
Scroll
সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক: বিএনপিকে জাতীয় কনভেনশন ডাকার প্রস্তাব

কেন বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯:৫১, ২২ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ২১:৪৭, ২২ এপ্রিল ২০২৫

কেন বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা

প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা । ছবি: সংগৃহীত

প্রায় সময়ই বিভিন্ন তুচ্ছ ঘটনায় বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বেশিরভাগ সময়ই সংঘর্ষ সৃষ্টি হয় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে।

এছাড়াও নারী ঘটিত বিবাদ, এলাকার আধিপত্য বিস্তার, দুই কলেজের রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায়শই এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তবে সম্প্রতি উঠে আসে আরেকটি তথ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করেছেন। এরপর বন্যায় ত্রাণ বিতরণের সময় তাদের মধ্যে নানান মতের অমিল দেখা যাওয়ায় কথাকাটাকাটির ঘটনাও ঘটেছে।

সব মিলে শেষ আট মাসে অন্তত ১০ বার দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ সংঘঠিত হয়। এসব ঘটনার প্রায় প্রত্যেকটির সূত্রপাত একই ধাঁচের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুরুতে কলেজের কোনো একজন শিক্ষার্থীকে অপর কলেজের শিক্ষার্থীরা মারধর করেন। পরে তার প্রতিশোধ নিতে যান অপর কলেজের একদল। এভাবে দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরাই পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এসব সংঘর্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা একে অপরের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারেন। এতে একাধিকজন আহন হন।

আর এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের গণ্ডগোলে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী। কারণ, এই দুই কলেজের সংঘর্ষে অবধারিতভাবেই নিউ মার্কেট থেকে সিটি কলেজের দিকের মিরপুর রোড ব্লকড হয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের একে অপরের প্রতি রয়েছে চরম অশ্রদ্ধা। অনলাইনে কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায়শই পরস্পরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। পরে এই অনলাইনের বিবেদ-দ্বন্দ্ব নেমে আসে রাস্তায়। তখন দুটি পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। দুইটি কলেজের অবস্থান খুব কাছাকাছি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হন বারংবার।

আজকের (২২ এপ্রিল) আগে সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়িয়েছে কলেজ দুটি। শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করলে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী সায়েন্সল্যাব এলাকায় যায়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দু’পক্ষই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে একজন আহত হন।

সংঘর্ষের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম ঢাকা এক্সপ্রেসকে জানান, কী কারণে ঘনঘন সংঘর্ষ হয় তা শিক্ষার্থী এবং আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না।

আজকের ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে তিনি বলেন, পরে তদন্ত করে দেখব আমরা। তবে শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যেই এই কাজ (সংঘর্ষ) করে থাকে।

৮ মাসে সংঘর্ষ ১০ বার

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের সংঘর্ষে ৭ জন আহত হন। এখানেও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের ২ জনের ওপর হামলা করেন বলে রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ধানমন্ডি জোন) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজিমপুর এলাকায় সিটি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরস্পর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আহত হন ৫ জন। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক উত্তেজনা চলে।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মারধর করে কলেজে আটকে রাখেন। এমন অভিযোগ ঢাকা কলেজে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

এছাড়া, ১৯ জানুয়ারি এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করেন ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে তার কারণ জানা যায়নি।

২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের কথা ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ২০ নভেম্বর দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। এতে অন্তত ৩৭ জন আহত হন বলে জানা যায়। পরে ঢাকা কলেজ একদিন এবং সিটি কলেজ তিনদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজ এবং আইডিয়াল কলেজের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কথা কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষ শুরু হলে পরে তা বড় আকার ধারণ করে। এই সংঘর্ষে ১৮ জন আহত হয়। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর ফের আইডিয়াল কলেজ ঢাকা কলেজের বাসে হামলা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব ঘটনায় বারবার সতর্ক করেও কোনো অংশকে ক্ষান্ত করা যায়নি। গত ১৫ এপ্রিলের ঘটনায় ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ এফ এম মোবারক হোসেন শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছেন। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে আগেও একাধিকবার সতর্ক করলে কোনো কাজ হয়নি।

কী বলছেন দুই কলেজের অধ্যক্ষ

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেন, মারধরের ক্ষেত্রে প্রথমে কাজ করে শিক্ষার্থীদের ইগো। এক ধরনের সুপেরিয়রিটি কমপ্লেক্স আছে তাদের মধ্যে। তারা ছোট ঘটনা বড় আকারে সৃষ্টি করে। এদিকে সিটি কলেজ এবং আইডিয়াল কলেজে সহশিক্ষা আছে, ঢাকা কলেজে নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এই তিন কলেজ একসাথে কাজ করেছে। তবে এরপর বন্যায় ত্রাণ বিতরণের সময় তাদের সঙ্গে কিছু কথাকাটাকাটি হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে, সেখানেও নানা ব্যাপারে কথা কাটাকাটি হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই মহল্লায় থেকে তিনজন আগে একই স্কুলে পড়েছে। এখন তিনজন তিন স্কুলে পড়ছে। এদের মধ্যে সুপেরিয়রিটি কমপ্লেক্স থাকে। একেবারে এসব ব্যক্তিগত পর্যায় ও মহল্লার ঘটনাগুলো এরা কলেজে নিয়ে আসে। তখন এটা ছড়িয়ে গিয়ে বড় আকার ধারণ করে।

আজকের (২২ এপ্রিল) সংঘর্ষের পর ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন বলেন, ‘গতকাল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ঢাকা কলেজের একজন ছাত্র আহত হয়েছে। তাকে কে বা কারা আক্রমণ করেছে আমরা জানি না। সংবাদ পাওয়ার পর আজকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এই শঙ্কায় আমরা ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরাও বলেছেন, তাঁদের শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে না, গন্ডগোল করবে না। আমরাও আমাদের ছাত্ররা যাতে কোনো ধরনের গন্ডগোলে লিপ্ত না হতে পারে, আমরা সকাল থেকে শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করে ১১টার দিকে দেখলাম, কিছু ছাত্র নামের দুষ্কৃতকারী ঢাকা সিটি কলেজের স্থাপনায় হামলা করল, বর্বরোচিত হামলা। আমাদের সাইনবোর্ডগুলো খুলে নিল। আমরা দেশবাসীর কাছে এই বর্বরোচিত হামলার বিচার চাই। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই।’ ‎

 

ঢাকা এক্সপ্রেস/ এসএ 

আরও পড়ুন