ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

৩০ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ রমজান ১৪৪৬

নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন, ডিসি ও ইউএনওর ভূমিকা সংকুচিত

ভোট কমিটির নতুন কাঠামো: ডিসি-ইউএনওর পরিবর্তে কে থাকছে নেতৃত্বে?

নির্বাচন কমিশনের নতুন নীতিমালা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:১৬, ৮ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ২১:১৯, ৮ মার্চ ২০২৫

ভোট কমিটির নতুন কাঠামো: ডিসি-ইউএনওর পরিবর্তে কে থাকছে নেতৃত্বে?

ভোট কমিটির নেতৃত্বে থাকছে না ডিসি–ইউএনও

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্র নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন-সংক্রান্ত কমিটির নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও)। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা না বাড়িয়ে বরং বিভিন্ন সময় উল্টো কমিয়েছিল বিগত কমিশন। অতীতে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকতেন ইসির কর্মকর্তারা। কিন্তু গত সংসদ নির্বাচনের আগে আউয়াল কমিশন এ জন্য আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে। এতে মহানগর ও জেলা কমিটিতে ডিসি এবং উপজেলা ও থানা পর্যায়ের কমিটিতে ইউএনওদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এসময় ডিসি এবং ইউএনওকে কমিটির প্রধান করায় আপত্তি জানিয়েছিল ইসি কর্মকর্তারা। তবে সেই আপত্তিকে কোনও গুরুত্ব দেননি তৎকালীন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ডিসি, ইউএনও, পুলিশকে এই কাজে সম্পৃক্ত করে দুটি আলাদা কমিটি করেন তিনি।

তখন উপজেলা ও থানা ভোটকেন্দ্র স্থাপন কমিটিতে ইউএনওকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এতে সদস্য হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আর মহানগর বা জেলা পর্যায়ে ডিসিকে আহ্বায়ক এবং সিনিয়র জেলা বা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়।

এ ছাড়া এতে সদস্য হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের উপযুক্ত একজন প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের উপযুক্ত একজন প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে রাখা হয়। ভোটকেন্দ্র নীতিমালা সংশোধন হলে এসব কমিটির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছে বর্তমান কমিশন।

সম্প্রতি সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ  রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে ভোটকেন্দ্র নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় ইসি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে নানান যুক্তি তুলে ধরা হয়। এসময় কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম এ বিষয়ে কমিটির সদস্যদের বিগত কয়েক বছরের সংসদ নির্বাচনের আগে করা ভোটকেন্দ্র নীতিমালা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে বিষয়টি উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।

সভায় একজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, গত নির্বাচনের আগে পাহাড়ি এলাকায় ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশের সময় ডিসির নির্দেশনা অনুযায়ী দূরের একটি ভোটকেন্দ্র অন্যত্র করার কথা বলা হয়। সে হিসেবে খসড়া প্রকাশ করলে এতে কয়েকজন ভোটার আপত্তি জানান। শুনানিতে এসে ওই ভোটাররা জানান, এভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে গেলে তাদের হেঁটে কেন্দ্রে আসতে তিন দিন লাগবে। পরে সেই চূড়ান্ত তালিকায় ওই ভোটকেন্দ্র আগের মতো করা হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত-সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি এখনো ধরিনি, ধরব।’

ভোটকেন্দ্র নীতিমালা সংশোধন করবেন কি না, জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘সবকিছু ঠিকঠাক করা দরকার। আমরা এটি দেখব। তবে যেগুলো প্রয়োজন, সেগুলো অবশ্যই ঠিক রাখা হবে।’
 

বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আর ভোট কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোট পরিচালনার জন্য নতুন কাঠামো ঘোষণা করেছে। এই পরিবর্তনের ফলে ভোট পরিচালনায় কাদের ভূমিকা থাকবে এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন