শিরোনাম
ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ১৩:১৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৩:২০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্নাকে কিডনি দানকারী তার বোন সামসুন নাহার আইভী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে কিডনি জটিলতায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এই বোন। মৃত্যুকালে রেখে যান দুই পুত্র ও কন্যা সন্তান।
মুন্নার বাবা ডা. হাসান আলী এবং মা খোরশেদা বেগম পরপারে চলে গেছেন। মুন্নারা পাঁচ বোন, চার ভাই। মুন্নার অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। মুন্নার দুই কিডনি নষ্ট হলে ভারতের বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়ায় হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য। সঙ্গে ছিলেন বোন আইভী এবং মেজো ভাই হুমায়ুন কবির। বোনের টিস্যু মিলে যাওয়ায় কিডনি দেন আইভী। পাঁচ বছর বেঁচে ছিলেন মুন্না। ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি এই কিংবদন্তির। এক কিডনি নিয়ে বোন আইভী অনেকটা বছর সুস্থ থাকলেও গেল কয়েকবছর ভুগছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে পাইওনিয়ার লিগ দিয়ে ফুটবলে অভিষেক হয় মোনেম মুন্নার। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে পেশাদার ফুটবলে উত্থান। প্রথম দুই মৌসুম মুক্তিযোদ্ধায়, এরপর এক মৌসুম ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেন। ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। এরপর দু-একটি ম্যাচ বাদ দিলে টানা ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন এই ডিফেন্ডার।
১৯৯১ সালে দলবদলে মুন্না আবাহনীর হয়ে রেকর্ড পরিমাণ পারিশ্রমিক পান, যা ছিল ওই সময়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক অনন্য রেকর্ড। আবাহনীর হয়ে তার ফুটবল ক্যারিয়ারে দলকে পাঁচবার ঢাকা লিগ এবং তিনবার ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতাতে সক্ষম হন।
১৯৮৭ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা আবাহনীতে। সেখানেই গড়ে তোলেন নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আবাহনীর সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন। ১৯৯১ মৌসুমের দলবদলে মুন্না আবাহনীতে খেলেছিলেন সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে। ওই সময় প্রভাবশালী ম্যাগাজিন বিচিত্রার কাভারও হয়েছিলেন এই তারকা।
১৯৯০ সালে বেইজিং এশিয়ান গেমসে মুন্না প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বেই ১৯৯৫ সালে মিয়ানমার থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে ঘরে ফেরে লাল-সবুজরা। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে যা প্রথম সাফল্য।
মোনেম মুন্নার ছোটভাই সাবেক ফুটবলার মকবুল হোসেন রতন জানান, মুন্নার জন্য আমাদের দেশে দৃশ্যমান তেমন কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের তথা ওপার বাংলাসহ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনে মুন্নার অবদান ভোলার মতো নয়। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে মুন্নার অস্তিত্ব নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। মুন্নার স্মরণে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে। মোনেম মুন্না সেতু যেটা আমরা অনেকেই জানি না। অযত্মে অবহেলায় ফলক চোখ এড়িয়ে যায়।